ঢাকা

শ্রীপুর হাসপাতালে সেবার মান বাড়লেও রোগীর চাপে হিমসিম কর্তৃপক্ষ!

শ্রীপুর-গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন ডাক্তার কর্মচারীরা। একই সাথে হাসপাতাল ফটকে দালালদের দৌরাত্ম্য ও মূল ফটকের যানবাহনের গাদাগাদি অবস্থান সেবায় বিড়ম্বনায় ফেলেছে।

মঙ্গলবার(১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতালটির বহিঃবিভাগে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশো রোগী। জরুরি বিভাগেও ভীর করছেন কাটা-ছেঁড়ার রোগীদের স্বজন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত জ্বর,সর্দি,কাশিসহ বিভিন্ন ফ্লুজনিত রোগীর অস্বাভাবিক চাপ দেখা দিয়েছে। বহির্বিভাগ ও শয্যায় অতিরিক্ত রোগীর চাপ নিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে বহির্বিভাগে কোনো কোনো চিকিৎসককে ৪ ঘণ্টায় দুই শতাধিক রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়। এ অবস্থায় জেলার দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটিতে দ্রুত বহির্বিভাগের চিকিৎসকের পদায়ন জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয়রা বলছে, শ্রীপুর উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম অবহেলার কারণে ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। সামান্য অসুস্থ হলেও রোগীদের গাজীপুর জেলা সদর হাসপাতাল যেতে হতো। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় কুমার দাস যোগদানের পর দুই বছরে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। এখন ভালো সেবা পাওয়ায় এ উপজেলা ছাড়াও আশপাশের কাপাসিয়া, গফরগাঁও এবং ভালুকা উপজেলার সীমানার রোগী আসছে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

হাসপাতাল সুত্র জানায়, ২০২২ সালের হিসেবে বহির্বিভাগে ২ লাখ ৭ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে অন্তর্বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮ হাজার ৯০০ এবং জরুরি বিভাগে ২৫ হাজার ৮০০ জন। ২০২০ সালে বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছেন ৯৪ হাজার ৭২১ জন। একই সময়ে অন্তর্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৮ এবং জরুরি বিভাগে ১৪ হাজার ৭২৫ জন। দুই বছরের ব্যবধানে হাসপাতালে বেড়েছে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যাও। ২০২০ সালে এ হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৬১৩ জন এবং সিজার হয়েছে ৯ জন প্রসূতির। ২০২২ সালে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ৭০৩ জন এবং সিজার হয়েছে ১২৪ জন গর্ভবতীর। এদিকে হাসপাতালের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। ২০২১ সালে রাজস্ব আয় ছিল ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৪ টাকা। ২০২২ সালে রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ২২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৬ টাকা। ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এ আয় ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৪ টাকা। সুত্র আরও জানায়, ৩১ শয্যার এই হাসপাতাল ২০১২ সালে ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন মিললেও আর্থিক সহায়তা ও জনবল পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও রোগী বাড়ায় হাসপাতালটি ১০০ শয্যা উন্নীতকরণ এবং ভবন বাড়ানো জরুরি। ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সরবরাহ কম থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিষ্কার পরিছন্নতা কর্মী,স্টোর কিপার,অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জরুরি। হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ২৮ জন, আছেন ২২ জন। ২৬ জন নার্সের মধ্যে আছেন ২৫ জন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৮৮ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ১৯টি পদের মধ্যে ১০টিই শূন্য।

সবকিছুর পরও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও চিকিৎসা সেবার মানে ইতিমধ্যেই সারাদেশের হাসপাতাল র‌্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে এ হাসপাতালটি। প্রায় ৫ একর জমির ওপর স্থাপিত হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে ঝকঝকে পরিবেশ। হাসপাতালে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে জরুরি বিভাগ। সুন্দর বিশ্রামাগার। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য তালিকা টানানো রয়েছে দেয়ালে এবং সীমানা প্রাচীরের ভিতরের চারপাশে রোপণ করা হয়েছে ফলদ-বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। হাসপাতাল চত্বর যেন একটা ছোটখাটো পার্ক। রয়েছে কয়েক’শ ফুল ও ফলের গাছ। উপজেলার গোসিংগা থেকে হাসপাতালে স্ত্রীকে ভর্তি করেছিলেন কফিল উদ্দিন । তিনি বলেন, “আগের চেয়ে এখনকার চিকিৎসক ও নার্সরা অনেক আন্তরিক। এখান থেকে ওষুধ দেয়াসহ যেকোনো সমস্যায় ডাকলে কাছে আসছে তারা”।

রাজাবাড়ি এলাকার মাছুম মিয়া জ্বর ও মাথা ব্যাথা সমস্যায় তার ভাইকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন,“আগে পরীক্ষার জন্য বাইরে যেতে হতো। এখন স্বল্প খরচে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা যাচ্ছে। আমরা তো আর ঢাকার বড় হাসপাতালে বেশী টাকায় চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষমতা নেই “। সন্তান ডেলিভারির ব্যাথা নিয়ে আমেনা খাতুন নামের স্ত্রীকে হাসপাতালে আনার পর নরমাল ডেলিভারিতে ছেলে শিশুর জন্ম হয়েছে। খুশিতে তার স্বামী বলেন, “ক্লিনিকে সিজার করাতে ২৫ হাজার লাগতো। আমি রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। এতো টাকা কেমনে দিতাম। এখানে বিনামূল্যে ডেলিভারি হয়েছে”।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় কুমার দাস মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, “আমি এখানে যোগদানের পর মাননীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ স্যারের পরিকল্পনা ও আমাদের বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় স্বাস্থ্য মান বৃদ্ধির কাজ করছি। এতে সহকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা,ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ সবাই সহযোগিতা রয়েছে । তিনি আরও বলেন, শ্রীপুর শিল্প অধ্যুশিত অঞ্চল হওয়ায় প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে ১২’শ রোগী সেবা নিতে আসে। সেখানে আমরা সেবার মান বাড়াতে কাজ করলেও কিছু জনবল সংকট রয়ে গেছে। যে কারণে মানুষ এখনো কিছু সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি এটাও কাটিয়ে উঠতে পারবো”।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খাইরুজ্জামান মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, “মফস্বলের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে অনেক চিকিৎসকই কাজ করতে চান না। উল্টো পরিবেশ শ্রীপুরে। এই হাসপাতালে ডা. প্রণয় যোগদানের পর থেকে সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে বেড়েছে সেবার পরিধি। আমরাও সার্বক্ষনিক তদারকি করছি।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button