সাকিব আল হাসানের সাথে বল হাতে রচনা করেছিলেন জয়ের পথ। ব্যাট হাতেও চাপের মুখে দাঁড়িয়ে গেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সাথে নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল বাংলাদেশ।
ধর্মশালায় শনিবার ৩৭.২ ওভারে আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ৩৪.৪ ওভারে ৬ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে সাকিব আল হাসানের দল।
সহজ লক্ষ্যে ২৭ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তিনে নামা মিরাজ আর চারের ব্যাটার শান্ত এরপর গড়েন ১২৯ বলে ৯৭ রানের জুটি। ২২.১ ওভারে দলীয় শতক পূর্ণ করে বাংলাদেশ।
ক্যারিয়ারের ৫৭ বলে তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন মিরাজ। রহমত শাহকে হাঁকাতে গিয়ে মিড অফে পরিনত হন নাভিন-উল-হকের দুর্দান্ত ক্যাচে।
বল হাতে ৯ ওভারে ৩ মেডেনসহ স্রেফ ২৫ রানে নেন ৩ উইকেট। ব্যাট হাতে খেলেন ৭৩ বলে ৫টি চারে ৫৭ রানের ইনিংস। ম্যাচসেরাও হয়েছেন এই স্পিন অলরাউন্ডার।
পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে স্কয়ার লেগে ক্য্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। মুশফিককে নিয়ে জয় নিয়ে ফেরেন শান্ত। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই ব্যাটার এবার অপরাজিত থাকেন ৮৩ বলে ৩টি চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রানে।
ফিল্ডারের হাতে বল দেখেও রান নিতে গিয়ে আউট হন তানজিদ হাসান। দলীয় ১৯ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায় ২৭ রানে। দারুণ শুরুর আভাস দিয়ে ফজলহক ফারুকির বলে ইনসাইড এজ বোল্ড হয়ে যান লিটন (১৮ বলে ১৩)।
এর আগে বল হাতে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব ও মিরাজ। দুই উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। একটি করে শিকার ধরেন তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের ফিল্ডিংটাও হয়েছে দারুণ।
টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। তবে বল হাতে সাফল্য পেতে অপেক্ষা করতে হয় নবম ওভার পর্যন্ত। সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে তানজিদ হাসানকে সহজ ক্যাচ দেন ইবরাহিম জাদরান। দলীয় ৪৭ রানে ২৫ বলে ২২ রান করে আউট হন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটেও আফগানিস্তানের জুটি বড় হতে দেননি সাকিব। পানি পানের বিরতি থেকে ফিরেই তার শিকার রহমত শাহ। ২৫ বলে ১৮ রান করে টপ এজ হন রহমত। খাড়া আকাশে ওঠা ক্যাচ সিলি মিড উইকেট থেকে নেন লিটন। ভাঙে ৪১ বলে ৩৬ রানের জুটি।
একের পর এক ডট বলে ব্যাটারদের উপর চাপ তৈরি করলেও মিরাজ পাচ্ছিলেন না উইকেটের দেখা। অবশেষে সফলতা পেয়ে যান তিনিও। মিরাজকে হাঁকাতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন হাশমতউল্লাহ (৩৮ বলে ১৮ রান)। বৃত্তের কাছ থেকে ক্যাচ নেন তাওহিদ হৃদয়। পরের ওভারে ভয়ঙ্কর রহমানউল্লাহ গুরবাজকে আউট করেন মুস্তাফিজ। ডিপ কাভার থেকে গুরবাজের ক্যাচ নেন তানজিদ। ৬২ বলে ৪৭ রান গুরবাজের।
১ উইকেটে ৮৩ রান থেকে ৪ উইকেটে ১১২। এরপর আর দাঁড়াতে পারেনি। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ক্লিন বোল্ড করে নিজের তৃতীয় শিকার ধরেন সাকিব।
এরপর মোহাম্মদ নবিকে বোল্ড করেন তাসকিন। আজমতউল্লাহর স্টাম্প ছিটকে দেন শরিফুল। রশিদ খানকে বোল্ড করে দ্বিতীয় আর মুজিব-উর রহমানকে বোল্ড করে তৃতীয় শিকার ধরেন মিরাজ।
একই মাঠে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারা দলটির বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে সাকিব-মিরাজদের জন্য।
আফগানিস্তান: ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ (রহমানউল্লাহ ৪৭, ইব্রাহিম ২২, রহমত ১৮, হাশমতউল্লাহ ১৮, নবি ৬, নজিবুল্লাহ ৫, আজমতউল্লাহ ২২, রশিদ ৯, মুজিব ১, নভিন-উল-হক ০, ফারুকি ০; অতিরিক্ত ৮; তাসকিন ৬-০-৩২-১ শরিফুল ৬.২-১-৩৪-২, মুস্তাফিজ ৭-১-২৮-১, সাকিব ৮-০-৩০-৩, মিরাজ ৯-৩-২৫-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০)।
বাংলাদেশ: ৩৪.৪ ওভারে ১৫৮/৪ (তানজিদ ৫, লিটন ১৩, মিরাজ ৫৭, শান্ত ৫৯*, সাকিব ১৪; অতিরিক্ত ৮; ফারুকি ৫-০-১৯-১, মুজিব ৭-০-৩০-০, নাভিন ৫.৪-০-৩১-১, রশিদ ৯-০-৪৮-০, নবি ৬-১-১৮-০, আজমতউল্লাহ ২-০-৯-১)।
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান মিরাজ।