দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। গত শুক্রবার সকাল আটটা থেকে গতকাল শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে ২৫৭ জনের মৃত্যু হলো, অর্থাৎ দিনে ১২ জনের বেশি মারা গেছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর প্রধান কারণ ছিল ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশ্লেষণ বলছে, এবার দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রধান কারণ ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’। প্রায় ৭৪ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। তুলনামূলকভাবে কেন রোগীদের মধ্যে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বেশি দেখা যাচ্ছে, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বলছে, এবার ডেঙ্গু ভাইরাস ডেনভি-৩-এর প্রকোপ বেশি। এর উপসর্গ ও জটিলতা অনেক বেশি মারাত্মক।
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন বা সেরোটাইপ আছে: ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩ ও ডেনভি-৪। প্রাথমিকভাবে এক রকমের সেরোটাইপ দিয়ে সংক্রমিত হলে শরীরে জীবনব্যাপী রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়। পরে অন্য সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু হেমোরোজিক জ্বর বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের লক্ষণ হচ্ছে রক্তক্ষরণ ও শরীরের পানিশূন্যতার কারণে রোগী অচেতন হয়ে পড়া। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গুর ব্যাপারে মানুষকে আরও সচেতন করার প্রয়োজন আছে।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৫২ হাজার ৯৯০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
সাধারণত অক্টোবর মাসের দিকে এসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে। তবে চলতি অক্টোবর মাসেও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৯ হাজার ৫৮৪ জন, অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৩৬১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।