জীবন ধারণের অপরিহার্য উপাদান পানি। কিন্তু দূষিত পানি পানে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে নানা রোগে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রাজধানী ঢাকার পানির মান নিয়ে সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় উঠে আসে ঢাকা নগরীর ফুটপাতের চায়ের দোকানে ব্যবহৃত পানির ৯৪ শতাংশেই মলের জীবাণু পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া ৪৪ শতাংশ পানিতে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া এবং ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ পানিতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ক্ষতিকর জীবাণু ও ধাতুর সংক্রমণে মানুষ প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
গবেষণায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫০টি ওয়ার্ড থেকে দৈবচয়নের মাধ্যমে ১৫০টি নমুনা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩২টি ওয়ার্ড থেকে ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাস্তার পাশের চায়ের দোকান ও খাবার বিক্রির দোকান থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় সঠিক তথ্য নিশ্চিতে সংগৃহীত নমুনা শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় আনা হয়। মাত্র দুই ঘটনার মধ্যে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে সংগৃহীত পানির নমুনার পরীক্ষা শুরু হয়।
জানা যায়, ঢাকাবাসীর পানি নিয়ে পরিচালিত এ গবেষণা শুরু হয় ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত। ২০২১ সালের মার্চ ও এপ্রিলে নমুনা সংগ্রহ, এপ্রিল ও মে মাসে নমুনা পর্যালোচনা এবং জুন মাসে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও চূড়ান্ত করা হয়। তবে এই গবেষণায় পাওয়া ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ বা প্রচার করা হয়নি।
রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, “ফিল্টার পানির নামে যাঁরা জারে ভরে পানি সরবরাহ করেন, তাঁরা মূলত প্রতারণা করেন। কারণ এসব পানি মানসম্পন্ন ফিল্টার করা হয় না। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, পৃথিবীর ৭০০ মিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জাতিসংঘ ২০০২ সালের মানবাধিকার ঘোষণায় পানিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করে। এসডিজির ৭ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায়ও ছিল নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা।”
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মিঠু বলেন, “এই গবেষণা যখন পরিচালিত হয়েছে, তখন আমি এই প্রতিষ্ঠানে ছিলাম না। তা ছাড়া গবেষণা যখন সম্পন্ন হয়েছে, তখন দেশের করোনা পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক পর্যায়ে। তাই এটি প্রকাশ বা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি থেকে ঢাকার পানি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পারলে ঢাকাবাসীর অসুস্থতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।”