রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ের সাক্ষী হলো স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ। আক্রমণের জবাবে চলল পাল্টা আক্রমণ, গোলের জবাবে গোল। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে আট মিনিটের জোড়া গোলে এগিয়ে গেল চেলসি। ম্যানচেস্টার সিটিও চুপ থাকবে কেন! বিরতির পরও লড়াইয়ের তীব্রতা কমল না এতটুকু। নাটকীয়তায় ঠাসা ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত যদিও দেখল না বিজয়ীর মুখ।
চেলসির মাঠে রোববার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটিতে দুই অর্ধেই দেখা মিলেছে চারটি করে গোল। উভয় পক্ষই পেয়েছে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ, কিন্তু কেউই তা ধরে রাখতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৪-৪ ড্রয়ে শেষ হলো হাইভোল্টেজ লড়াইটি।
আর্লিং হলান্ড শুরুতে সিটিকে এগিয়ে দেওয়ার পর সমতা টানেন চিয়াগো সিলভা। খানিক পর রাহিম স্টার্লিংয়ের গোলে এগিয়েও যায় চেলসি। অবশ্য বিরতির আগেই মানুয়েল আকনজির লক্ষ্যভেদে সমতায় থেকে বিরতিতে যায় সিটি।
দ্বিতীয় অর্ধের শুরুতে আবারও হলান্ডের গোল। এরপর নিকোলাস জ্যাকসনের গোলে দ্বিতীয় দফায় সমতায় ফেরে চেলসি। যে গতিতে চলছিল ফুটবল, তাতে সত্যি বলতে বোঝাই যাচ্ছিল- গোল আসবে আবার। মিলেও গেল, শেষ দিকে রদ্রির গোলে ফের এগিয়ে গেল সিটি। হাতে সময় বেশি ছিল না, চ্যাম্পিয়নদের জয়ের সম্ভাবনাই তখন হয়তো দেখছিল অনেকে।
তবে, এমন উত্তেজনা আর বারবার বাঁক বদলের লড়াইয়ে শেষের নাটকীয়তার তখনও ছিল বাকি। হাল না ছেড়ে আট মিনিট যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে জালে বল পাঠালেন কোল পালমার। কয়েক দফায় এগিয়েও গিয়ে পূর্ণ পয়েন্ট না পাওয়ায় হতাশা থাকতে পারে সিটির, তবে এমন লড়াইয়ে ড্রও কম স্বস্তির নয়।
ম্যাচের শুরুটা যদিও ছিল কিছুটা ঢিমেতালে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গতি। এর মাঝে ২৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় সিটি।
চেলসির ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেইয়া ডি-বক্সে হলান্ডকে ফাউলকে করে হলুদ কার্ড দেখেন। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন চেলসির মিডফিল্ডার কোল পালমারও। নিখুঁত স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন হলান্ড।
তিন মিনিট পরই স্কোরলাইনে আসতে পারত সমতা। রিস জেমসের বাঁকানো ফ্রি-কিকে বল ওপরের কোনা দিয়ে জালে ঢুকতে যাচ্ছিল, অসাধারণ নৈপুণ্যে এক হাত দিয়ে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান এদেরসন।
ওই কর্নার থেকেই পরের মিনিটে স্কোরলাইন ১-১ করে দেন সিলভা। ছয় গজ বক্সে হেডে গোলটি করেন অভিজ্ঞ ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। ৩৭তম মিনিটে রিস জেমসের পাস পেয়ে কাছ থেকে সাবেক ক্লাবের জালে বল পাঠান স্টার্লিং, এগিয়ে যাওয়ার উল্লাসে ফেটে পড়ে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ।
চেলসির এগিয়ে যাওয়ার আনন্দও অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ের খেলা চলে সাত মিনিট ধরে, তারই প্রথম মিনিটে সিলভার ক্রসে অরক্ষিত সুইস ডিফেন্ডার আকনজি হেডে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতে আবারও সিটির গোল এবং গোলদাতা সেই হলান্ড। কাছ থেকে জালে বল পাঠিয়ে সিটিকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে নেন হলান্ড।
এবারের লিগে নরওয়ের এই স্ট্রাইকারের গোল হলো ১৩টি। গতবারের রেকর্ড স্কোরার এবারও এখন পর্যন্ত আছেন তালিকার শীর্ষে।
৬০তম মিনিটে আবারও সমতায় ফিরতে পারতো চেলসি। বল পায়ে প্রতিপক্ষের কয়েক জনের বাধা এড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন কোল পালমার; তবে শেষে যথেষ্ট জোরে শট নিতে পারেননি তিনি। সঠিক সময়ে এগিয়ে গিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক এদেরসন।
সাত মিনিট পরই অবশ্য স্কোরলাইন ৩-৩ করেন জ্যাকসন। কনর গ্যালাঘারের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন এদেরসন, কিন্তু বল হাতে রাখতে পারেননি। ফিরতি বল প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচু শটে গোলটি করেন সেনেগালের তরুণ ফরোয়ার্ড।
সফরকারীদের তৃতীয়বারে এগিয়ে যাওয়ায় ভাগ্যের সহায়তা ছিল। রদ্রির বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ঠেকাতে পা বাড়িয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার সিলভা, বল তার পায়ে লেগে দিক পাল্টে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষকের।
গোল উৎসবের শুরুটা যেভাবে হয়েছিল, শেষটাও হয় সেই স্পট কিকে। বক্সে চেলসির আরমান্দো ব্রোহাকে সিটির রুবেন দিয়াস ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। নিখুঁত শটে ম্যাচের অষ্টম ও শেষ গোলটি করেন পালমার।
পুরো ম্যাচে বল দখলে কিছুটা এগিয়ে ছিল পেপ গুয়ার্দিওলার সিটি। সেখানে গোলে শট নেওয়ার দিক থেকে আবার এগিয়ে চেলসি। মাওরিসিও পচেত্তিনোর দলটি গোলের উদ্দেশ্যে ১৭টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে ৯টি। আর সিটির ১৫ শটের ১০টি ছিল লক্ষ্যে।
টানা তিন জয়ের পর আবারও পয়েন্ট হারাল ম্যানচেস্টার সিটি। তারপরও লিগ টেবিলের শীর্ষেই আছে তারা; ১২ ম্যাচে ৯ জয় ও ১ ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ২৮।
দিনের আরেক ম্যাচে ব্রাইটনকে ৩-০ গোলে হারানো লিভারপুল ২৭ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুইয়ে। তাদের সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে তিন নম্বরে আর্সেনাল।
শীর্ষস্থান থেকে একটু একটু করে নামতে থাকা টটেনহ্যাম হটস্পার ২৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে।
পাঁচ নম্বরে অ্যাস্টন ভিলার পয়েন্ট ২৫। তাদের চেয়ে ৪ পয়েন্ট কম নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।