পিঠ ব্যথা প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরী হলো আপনার পিঠের উপর চাপ কমানো। তাই দৈনন্দিন চলাফেরা এবং কাজকর্মের সময় আপনার দেহভঙ্গীর দিকে খেয়াল রাখুন। মানব দেহের মেরুদন্ডের পিঠের অংশটি বারোটি কশেরুকা (T1 থেকে T12) নিয়ে গঠিত।
মেরুদণ্ডের এই অংশটি স্থিতিশীলতার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং শরীরকে সোজা রাখতে ও বিশেষ অঙ্গগুলিকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাঁজরের হাড়গুলো কশেরুকার সাথে যুক্ত হয়ে বক্ষ পিঞ্জর তৈরি করে। থোরাসিক মেরুদণ্ডটির উপরের দিকের সার্ভাইকাল (ঘাড়) এবং নিচের দিকের লাম্বার বা কোমরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
পেশী, লিগামেন্ট, স্নায়ু এবং ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্কগুলিও ডোরসাল বা পিঠের অঞ্চলের অংশ গঠন করে, এবং এগুলোর কোন সমস্যা হলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। পিঠে ব্যথা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন তীব্র ব্যথা, ঝিন-ঝিন, ভার-ভার,অবশ-অবশ, বা জ্বালাপোড়াও হতে পারে। এই ব্যথা পিঠের এক যায়গায় থাকতে পারে বা অন্যান্য অংশে দেখা দিতে পাড়ে ,যেমন হাতে বা পায়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। পিঠে ব্যথা একটি বড় সমস্যা যা বিভিন্ন কারণের কারণে হতে পারে যেমন পেশী স্ট্রেন, আঘাত, বিকৃত ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো বা অন্য কোনো রোগের জন্যও হতে পারে।
কিছু কাজ আছে যেগুলিকে আপনার দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে পিঠে ব্যাথা বা ব্যাকপেইন থেকে সহজেই দূরে থাকা সম্ভব। চলুন এমন নয়টি অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নিই।
১. বিশ্রাম নেয়াঃ পিঠে ব্যথার অনেক ক্ষেত্রেই সহজে ঘরোয়া উপায়ে কিছুটা প্রতীকার কারা যেতে পারে। বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ব্যথার প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে দীর্ঘ সময় বিশ্রামে থাকা যাবে না কারণ এটি পিঠে ব্যথাকে আরও খারাপ করতে পারে। ব্যথা আরও খারাপ করে এমন কাজ কর্ম গুলি এড়িয়ে চলা লাগবে ,ব্যাথা এড়াতে নিয়মিত হাঁটা এবং চলাফেরা করতে হবে।
২. গরম এবং ঠান্ডা সেক দেওয়াঃ প্রথম কয়েক দিনের মধ্যে দিনে ৩-৪ বার ২০ মিনিট করে ঠান্ডা সেক দিন, কয়েকদিন পর, গরম সেক দিন।
৩. এক্সারসাইজঃ নিয়মিত এক্সারসাইজ মানষিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, হাড় এবং পেশী শক্তিশালী করতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজ করার ক্ষমতাকে উন্নত করতে পারে। ফিটনেস ভালো রাখার জন্য নিয়মিত এক্সারসাইজ এবং খেলাধুলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পিঠে ব্যাথা রোধ করতে আমারা ভিবিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ করতে পারি যেমনঃ
- ওয়াল এক্সটেনশন এক্সারসাইজঃ বাসায় ঘরের কোনে সোজা হয়ে দাড়িয়ে দুই হাত দুইপাশের দেয়ালে রেখে বুক সামনের দিকে নিয়ে আসুন এবং ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, এই ভাবে ১০ বার করে দিনে ৩ বেলা করুন।
- ব্যাক এক্সটেনশন এক্সারসাইজঃ উপুর হয়ে বা বুকের উপর শুয়ে হাত দুইটা কাধ বরাবর রেখে মাথাসহ বুক উপরের দিকে তুলুন কিন্তু কোমড় উঠানো যাবে না, এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এই ভাবে ১০ বার করে দিনে ৩ বেলা করুন।
৪. সঠিক ভাবে বস্তু উঠানোর কৌশলঃ নিচু জায়গা থেকে কোন বস্তু উঠানোর সময় কোমর বেঁকে নয় বরং মেরুদন্ড সোজা রেখে হাঁটু বেঁকে বস্তুটি মাটি থেকে তুলুন। উত্তোলনের সময় আপনার শরীর মোচড়ানো এড়িয়ে চলুন।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ অতিরিক্ত ওজন আপনার পিঠে আরও চাপ দেয়। তাই নিজের ওজন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন।
৬. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টঃ অতিরিক্ত স্ট্রেস আপনার মাসল স্পাজম করতে পারে যার ফলে ব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত চাপে পেশীতে ক্র্যাম্প হতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান, যোগব্যায়াম বা তাই চি-এর মতো স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করতে পারে। উপরন্তু, পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং অবসর সময় খেলাধুলা করা, স্ট্রেস ও মানসিক চাপ কমাতে পারে এবং ফলস্বরূপ, পীঠে ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। পিঠে ব্যথার সমস্যা হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। সচেতনতা এবং উপুযুক্ত চিকিৎসা এমনকি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগীরা কেবল মাত্র পিঠের ব্যথা কার্যকরভাবে কমাতে পারে না বরং প্রতিরোধের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নিতে হবে।
৭. জুতা বদলান: হাই-হিলের জুতা আপনার পিঠের ক্ষতির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে তা যদি নিয়মিত পরেন। তাই অল্প উচ্চতার সমান তলিওয়ালা জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করুন।
৮. ভিটামিন ডি গ্রহণের পরিমাণ বাড়ান: পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণ করে আপনার মেরুদন্ডের হাড় মজবুত রাখুন। ক্যালসিয়াম অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে, যা বিশেষ করে নারীদের পিঠে ব্যথার একটি বড় কারণ। দুধ, দই, শাকে আপনি পাবেন ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি পাবেন চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, গরুর যকৃত বা কলিজা কিংবা পনিরে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ক্যালসিয়াম বড়ি পাওয়া যায় যা কার্যকত। তবে ভিটামিনের বড়ি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।
৯. হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে ঘুমান: উপুড় হয়ে বা চিৎ হয়ে ঘুমালে আপনার মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে। ঘুমের সময় আপনার পা সামান্য উঁচু করে রাখলে পিঠের এই চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে আপনি আপনার পিঠের উপর চাপ অর্ধেক কমে ফেলতে পারেন।