জেমস ফুলার, মোহাম্মাদ সাইফুদ্দিনদের বোলিং সামলে বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন শামীম হোসেন। লড়াইয়ের পুঁজি পেল রংপুর রাইডার্স। কিন্তু সংগ্রহটা যথেষ্ট প্রমাণ করতে পারলেন না বোলাররা। লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ ব্যাটিং উপহার দিলেন মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল হাসানের রংপুরকে উড়িয়ে ফাইনালে উঠে গেল তামিম ইকবালের ফরচুর বরিশাল।
বিপিএলের দশম আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বুধবার রংপুরকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বরিশাল। ১৫০ রানের লক্ষ্য ৯ বল হাতে রেখে পূরণ করে তামিম ইকবালের দল।
আগামী শুক্রবারের ফাইনালে বরিশালের প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
রংপুরের হয়ে আটে নেমে ২৪ বলে ৫টি করে ছক্কা-চারে অপরাজিত ৫৯ রান করেন শামীম। তবে উইকেটের পিছনে চারটি ক্যাচ নেওয়ার পর চাপের মুখে ৩৮ বলে অপরাজিত ৪৭ রান করে ম্যাচের নায়ক মুশফিক।
সাকিবকে ছক্কায় উড়িয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নেন ডেভিড মিলার (১৮ বলে ২২*)।
লক্ষ্য তাড়ায় ৪ ওভারের মধ্যে ২২ রানে তামিম ও মেহেদি হাসান মিরাজকে হারিয়ে চাপে পড়ে বরিশাল। সৌম্য সরকারকে (১৮ বলে ২২) নিয়ে প্রাথমিকভাবে সেই ধাক্কা সামাল দেস মুশফিক। এরপর পাশে পান কাইল মেয়ার্সকে (১৫ বলে ২৮)।
দুজনেই বিদায় নিলেও আস্থার প্রতীক হয়ে ছিলেন মুশফিক। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়েন দলের জয় নিয়েই। তার ৩৮ বলে অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংসটি সাজানো ৬টি চার ও ১ ছক্কায়।
এর আগে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশালের বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চম ওভারের মধ্যেই ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে রংপুর।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে রংপুরের মেইক শিপ্ট ওপেনার মাহেদি হাসানকে ২ রানে শিকার করেন বরিশালের পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। মাহেদির বিদায়ে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। ওভারের শেষ বলে সাকিবকে ১ রানে সাজঘরে ফেরত পাঠান সাইফুদ্দিন।
পঞ্চম ওভারে রংপুরের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটান ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডিয়াম পেসার কাইল মায়ার্স। ১২ বলে ৮ রান করা ওপেনার রনি তালুকদারকে শিকার করেন মায়ার্স।
টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে ২৬ রান পায় রংপুর। চতুর্থ উইকেটে জুটি বেঁধে রংপুরকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে অপরাজিত ৯৭ রান করা নিউজিল্যান্ডের জেমস নিশাম ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান।
মায়ার্সের করা সপ্তম ওভারের শেষ তিন বলে ৩টি চার মারেন নিশাম। নবম ওভারের শেষ বলে পুরানকে ৩ রানে থামিয়ে বরিশালকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। পরের ওভারের প্রথম বলে নিশামকে তুলে নিয়ে রংপুরকে খাদের কিনারায় ফেলে দেন বরিশালের পেসার ইংল্যান্ডের জেমস ফুলার। চতুর্থ উইকেটে ২৬ বলে ৩০ রান যোগ করেন নিশাম ও পুরান।
৪৮ রানে ৫ উইকেট পতনে ব্যাকফুটে চলে যায় রংপুর। এ অবস্থায় বড় জুটির প্রয়োজন পড়ে রংপুরের। ষষ্ঠ উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবি ও অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ২ রানে ফুলারের হাতে জীবন পেয়ে সোহানের সাথে ৩১ বলে ২৮ রান যোগ করে উইকেটে সেট হয়ে যান নবি।
১৫তম ওভারে শেষবারের মত আক্রমনে এসে রংপুরের দুই সেট ব্যাটারকে বিদায় দেন ফুলার। ১টি করে বাউন্ডারিতে নবি ১২ রানে এবং সোহান ১৪ রানে ফুলারের বলে আউট হন। এতে ৭৭ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে ১শর নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে রংপুর।
কিন্তু অষ্টম উইকেটে আবু হায়দারকে নিয়ে শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন শামীম। ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭২ রান যোগ করেন তিনি। এরমধ্যে ২২ বলে শামীম ৫৮ রান ও আবু হায়দার করেন ৯ বলে ১২ রান। মাত্র ২০ বলে টি-টোয়েন্টি পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ন করেন শামীম। এবারের বিপিএলের দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরিতে নিজ দলের সাকিবকে স্পর্শ করেন তিনি। এর আগে এবারের আসরে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ২০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব।
বরিশালের পেসার ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওবেড ম্যাককয়ের করা ১৯তম ওভারে ৩টি ছক্কা ও ২টি চারে ২৬ রান নেন শামীম। ১২ রানে অপরাজিত থাকেন আবু হায়দার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৪৯/৭ (রনি ৮, মেহেদি ২, সাকিব ১, নিশাম ২৮, পুরান ৩, নাবি ১২, সোহান ১৪, শামীম ৫৯*, আবু হায়দার ১২*; মেয়ার্স ৪-০-২২-১, সাইফ ৪-০-২৭-২, ম্যাককয় ৪-০-৫৩-০, ফুলার ৪-০-২৫-৩, মিরাজ ২-০-৯-১, তাইজুল ২-০-৯-০)।
ফরচুন বরিশাল: (মিরাজ ৮, তামিম ১০, সৌম্য ২২, মুশফিক , মেয়ার্স ২৮, মিলার ; ফারুকি ৪-০-১৬-১, মেহেদি , আবু হায়দার , নিশাম ১-০-১৬-০, হাসান , নাবি , সাকিব)।
ফল: ফরচুন বরিশাল ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম।