মাথা ব্যাথার একটা বড় কারণ হলো মাইগ্রেন। তবে এটি কোনো সাধারণ মাথা ব্যাথা নয়। মাইগ্রেন হলো মাথার একপাশে কম্পন দিয়ে মাঝারি বা তীব্র ধরনের ব্যথা। কখনো কখনো এই ব্যথা মাথার একপাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ওই পাশের পুরো স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
মাইগ্রেন হওয়ার আগে শরীর আমাদের কিছু সতর্কবার্তা দেয়, তার মধ্যে একটি হলো চোখে হঠাৎ করে আলোর ঝলকানির মতো দেখা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাইগ্রেনের কোনো পূর্ব লক্ষণ থাকে না। এ ধরনের মাইগ্রেনই বেশি দেখা যায়। আবার মাইগ্রেনের সমস্যায় কখনো কখনো ব্যাথার সঙ্গে দৃষ্টি বিভ্রম বা বমি বমি ভাবও থাকতে পারে।
রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই যদি কিছু প্রস্তুতি নেওয়া যায় তাহলে রোজার সময় মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মাইগ্রেন বিষয়ক যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা দ্য মাইগ্রেন ট্রাস্ট এর তথ্য অনুযায়ী, কারো যদি মাইগ্রেন থাকে এবং এরপরও যদি তিনি রোজা রাখার প্রস্তুতি নিতে চান তাহলে তাকে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে-
১. ওষুধ: মুখে ওষুধ খেলে রোজা ভেঙ্গে যেতে পারে। এর কারণে রোজা শুরুর আগেই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। তাহলে তিনি আপনাকে নির্দেশনা দিতে পারবে যে, আপনি চিকিৎসা নিচ্ছেন তার আওতায় আপনি রোজা রাখতে পারবেন কিনা। আর রাখলেও আপনি কখন ওষুধ খাবেন। এক্ষেত্রে সেহেরির সময় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হতে পারে।
তবে সেটিও রমজানের কমপক্ষে একমাস আগে থেকে শুরু করতে হবে যাতে শরীর এর সাথে মানিয়ে নেয়ার পর্যাপ্ত সময় পায়। এছাড়া মুখে খাওয়ার ওষুধের পরিবর্তে মাইগ্রেনের আরো অনেক ধরনের ওষুধ রয়েছে। সেগুলোও আপনাকে দেয়া হতে পারে। তবে এসবের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২. পানিশূন্যতা: সারাদিন রোজা রাখার পর পানিশূন্যতা পূরণ করাটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তাই এটি পূরণে রোজা ভাঙার পর ইফতারির পর প্রচুর তরল খেতে ভুলবেন না। একইভাবে সেহরিতেও পর্যাপ্ত তরল খাবার গ্রহণ করুন। মিষ্টি জাতীয় পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি আপনার পানির পিপাসা আরো বাড়াবে।
৩. ঘুম: রমজানে যদি আপনার ঘুমের নিয়মে বেশি ব্যাঘাত ঘটে যেমন, এর জন্য যদি আপনাকে অনেক আগে-ভাগে ঘুম থেকে জেগে উঠতে হয় তাহলে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে। এটি এড়াতে এবং আপনার শরীরকে অভ্যস্ত করে তুলতে রমজান আসার আগে থেকেই এই সময়ে অ্যালার্ম দিয়ে একই সময়ে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করতে পারেন। এছাড়া রমজানে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম ভাঙার অভ্যাস গড়ে তুললে তাও মাইগ্রেন এড়াতে সহায়ক হতে পারে।
৪. ক্যাফেইন: যারা নিয়মিত ক্যাফেইন গ্রহণ করে থাকেন তাদের মনে হতে পারে যে, হঠাৎ করে ক্যাফেইন নেয়া বন্ধ করে দিলে হয়তো মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে কফি, চা বা কোকা-কোলা খেলে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে রমজানের সময় তা বন্ধ করে দিলে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা আরো খারাপ হতে পারে। এর জন্য বিকল্প হচ্ছে, রমজান শুরুর আগে থেকেই ধীরে ধীরে ক্যাফেইন গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে।
ধীরে ধীরে কমানোর ফলে এটি মাইগ্রেনের তীব্র ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে আনবে। এতেও কাজ না হলে রোজা শুরুর আগে অর্থাৎ সেহরিতে আপনি কিছু পরিমাণ ক্যাফেইন গ্রহণ করতে পারেন। তবে এর সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে ভুলবেন না।
৫. খাবারের সময়ে পরিবর্তন: ঠিক সময়ে খাবার না খেলে যদি আপনার মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয় তাহলে ভোর থেকে সারাদিন না খেয়ে থাকা নিয়ে হয়তো আপনি দুশ্চিন্তায় পড়তে পারেন। এটি কাটাতে সেহরিতে ভরপেট খাবার খান। বিশেষ করে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন মাংস, মাছ, ডিম, বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের বীজ, পূর্ণ আঁশযুক্ত শর্করা জাতীয় খাবার যেমন বাদামী চাল, ওটস বা পূর্ণ আঁশযুক্ত রুপি খেতে পারেন। যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াজাত খাবার বিশেষ করে যাতে বেশি পরিমাণ চিনি থাকে তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
নিউরোসার্জন ডা. আহমেদ আল-তামিমি বলেন, ”যেসব রোগীর তীব্র মাইগ্রেন অ্যাটাক হয় না এবং মাথাব্যথার সাথে যে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে, তারা স্বাভাবিক নিয়মেই রোজা রাখতে পারেন। কিন্তু কারো যদি ঘন ঘন মাথাব্যথা হয় এবং তার তীব্রতাও বেশি থাকে তাহলে তাদের ব্যথা কমানোটা আগে জরুরি। এর জন্য তাদের চিকিৎসা নেয়া উচিত এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।”