জীবনধারা

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও করণীয়

মোহনা অনলাইন

বাড়ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। সঙ্গে বাড়ছে হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকের ঝুঁকি। হিটস্ট্রোক হল অতিরিক্ত উত্তাপের একটি অবস্থা, সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘায়িত এক্সপোজার বা শারীরিক পরিশ্রম এবং তাপ নিয়ন্ত্রণে শরীরের ব্যর্থ প্রচেষ্টার ফলে।

গ্রীষ্মের কাকফাটা গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে শরীর থেকে সব পানি বেরিয়ে গিয়ে ঘাটতি তৈরি হয়। এছাড়া ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। হিট স্ট্রোকের কিছু লক্ষণ রয়েছে লক্ষণগুলো হচ্ছে-

তীব্র মাথাব্যথা: প্রচণ্ড গরমে মাথাব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া গরমে মানুষের মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। এটি হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হতে পারে।

হাইপারভেন্টিলেশন: শ্বাসকষ্ট এবং দ্রুত ও ভারী শ্বাস-প্রশ্বাসও হিটস্ট্রোকের লক্ষণ।

প্রচণ্ড তৃষ্ণা, পানিশূন্যতা, ঘাম: হিট স্ট্রোকের আগে ব্যক্তি চরম তৃষ্ণা অনুভব করতে পারে, সেইসঙ্গে ডিহাইড্রেটেড এবং আড়ষ্টতা অনুভব করতে পারে। শরীর নিজেকে ঠান্ডা করার জন্য অতিরিক্ত ঘাম তৈরি করতে পারে।

বিরক্তি, বিভ্রান্তি বা প্রলাপ বকা: অতিরিক্ত তাপের কারণে হিটস্ট্রোকের আগে মানুষ বিরক্ত বোধ করতে পারে, রাগান্বিত হতে পারে, অযৌক্তিক কথা বলতে পারে এবং এমনকি প্রলাপ বকতে করতে পারে।

দ্রুত হৃদস্পন্দন: হিট স্ট্রোকের আগে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হতে পারে।

বমি বমি ভাব: মাথাব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন ও হাইপারভেন্টিলেশন থেকে অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদির কারণে হিট স্ট্রোকের আগে বমি বমি ভাব হতে পারে।

দুর্বলতা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া: অতিরিক্ত উত্তাপের শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করে। শরীরে আরও ক্লান্তি ও দুর্বলতা তৈরি হয়। ব্যক্তি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এগুলো হিট স্ট্রোকের লক্ষণ।

কথা জড়িয়ে যাওয়া: হিট স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ কথা জড়িয়ে যাওয়া। ব্যক্তি অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করতে পারে।

পেশিতে ব্যথা: হিট স্ট্রোকের আগে যেসব লক্ষণ দেখা যায়, তারমধ্যে একটি হলো পেশি ব্যথা। যদিও  সাধারণ ব্যথা ভেবে মানুষ এটা গুরুত্ব দেয় না।

ঘাম না হওয়া: হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ হল প্রচণ্ড গরমেও ঘাম না হওয়া। সাধারণত এর মানে  হচ্ছে, শরীরে ঘাম হওয়ার মতো পানি আর নেই বা শরীরের প্রাকৃতিক শীতল প্রক্রিয়াটি কাজ করছে না।

গরমে বাড়ির বাইরে কম-বেশি সবাইকেই বের হতে হয়। তবে হিট স্ট্রোক এড়াতে যতটা সম্ভব ছায়ার মধ্যে থাকার চেষ্টা করবেন। পানি ও পানি জাতীয় খাবারের মাধ্যমে হাইড্রেটেড থাকতে হবে। তবে কৃত্রিম চিনিযুক্ত পানীয় থেকে দূরে থাকবেন।

প্রতিরোধ ও করণীয়

গরমের দিনে কিছু নিয়ম মেনে চললে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়। ঢিলেঢালা হালকা রঙের সুতি কাপড় পরা। যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে হবে। রোদে বাইরে যাওয়ার সময় টুপি, ক্যাপ অথবা ছাতা ব্যবহার করা উচিত। প্রচুর পরিমাণ পানি বা খাওয়ার স্যালাইন অথবা ফলের রস পান করতে হবে। রোদে দীর্ঘ সময় ঘোরাঘুরি করা যাবে না। গ্রীষ্মকালে তীব্র ও দীর্ঘ শারীরিক পরিশ্রম অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। তীব্র গরমে ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত চর্বি বা বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়া ভালো। এতে শরীরে তাপ জমা হয়। গরম চা-কফি, অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে।

হিট স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণগুলো দেখা দিলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীকে অপেক্ষাকৃত শীতল কোনো স্থানে নিয়ে যেতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। ফ্যান ছেড়ে দিতে হবে বা বাতাস করতে হবে। প্রচুর পানি বা খাওয়ার স্যালাইন পান করতে হবে। কাঁধে-বগলে অথবা কুঁচকিতে বরফ দেওয়া যেতে পারে। অবস্থার উন্নতি না হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।হিট স্ট্রোকে অনেক সময় বড় ধরনের ক্ষতি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গরমের এই সময়টায় তাই সাবধানে থাকতে হবে। দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও হাসপাতালে ভর্তি করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া গেলে বেশির ভাগ রোগীই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button