জীবনধারা

শিশুর জেদ কীভাবে সামলাবেন

মোহনা অনলাইন

জেদ করে না এমন বাচ্চা নেই বললেই চলে। কম বেশি জেদ সব বাচ্চাদের মধ্যেই থাকে। সাধারণত ৩ থেকে ৭ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে জেদ চেয়ে বেশি থাকে, তাই এই সময়টা বাচ্চাদের সঠিকভাবে বেড়ে তোলার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর জেদ সামলানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথম উপায় শিশুর বাবা-মাদের শান্ত থাকতে হবে।

কীভাবে সামলাবেন জেদ বা টেম্পার ট্যানট্রাম?

শিশুর জেদ সামলানোর প্রাথমিক উপায় নিজেদের মনকে শান্ত রাখা। তার জন্য দরকার উপযুক্ত প্ল্যানিং। প্রথম থেকেই যদি ওদের জেদজনিত ব্যবহারে লাগাম দেওয়া যায়, শিশুদের চারিত্রিক কাঠামোর অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় গোড়ার থেকেই।

১. নিজেকে স্থিতিশীল রাখুন: যখনই শিশুরা জেদ করা শুরু করবে মা-বাবা ও পরিবারের সবাইকে খুব শান্ত ও সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। যদি বাড়ির লোকের মধ্যে মতের অমিল হয় তার জেদের কারণ নিয়ে, তবু কোনোভাবেই শিশুর সামনে তা প্রকাশ করা চলবে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাড়ির গুরুজনেরা ওদের এ জেদের অভিব্যক্তি মেনে নিতে পারেন না এবং স্নেহবশত তাদের দাবি করা জিনিসটি তারা দিয়ে দেন। এটা একেবারেই ভুল পদক্ষেপ। শিশুরা খুব সহজেই পরিবারের মেরুকরণ বুঝতে পারে এবং সেই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে।

২. নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন: বাড়ির মধ্যে জেদের সূত্রপাত হলে শিশুকে কিছু খেলনা দিয়ে আলাদা করে বসিয়ে রাখুন। লক্ষ্য রাখবেন জায়গাটি যেন সুরক্ষিত থাকে, কারণ এসময় শিশুরা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় থাকে। নিজেরা শান্ত ও গম্ভীর থাকুন। খুব প্রয়োজনভিত্তিক কথা ছাড়া কোনোভাবেই কোনো অতিরিক্ত কথা বলবেন না। মারধোর বা বকাবকি করাও একদম নয় এসময়ে। এসময়ে কোনোভাবেই শিশুর সাথে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন না। শিশুর ব্যবহারকে কোনোরকম গুরুত্ব দেবার চেষ্টাও করবেন না। অ্যাটেনশন না পেলে ওদের মধ্যে শান্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে ট্যানট্রাম সাবসাইডিং।

৩. শিশুকে নিয়মের মধ্যে আনুন: শিশু সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের প্রতিদিনের প্রাত্যহিক কাজকর্ম একটি নিয়মের মধ্যে হওয়া উচিত। এতে শিশু বুঝতে পারবে যে কোনোটার পর কোন কাজটি করতে হবে এবং সেভাবে সে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। প্রতিদিনের খাওয়া, ঘুম, খেলা, বিশ্রাম নিয়মের মধ্যে হলে শিশু নিয়মানুবর্তী হয়ে উঠবে। পাশাপাশি অযৌক্তিক আচরণ থেকেও সে বিরত থাকবে।

৪. শিশুর মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন: একজন প্রাপ্তবয়স্কের মত সহজেই শিশুরা তাদের মনের ভাব বা চাহিদা প্রকাশ করতে পারে না। সুতরাং শিশু কি চাচ্ছে, কেনো জেদ করছে তা বোঝার চেষ্টা করুন এবং শিশুকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। শিশুকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করুন যে, সে বই পড়বে নাকি খেলনা দিয়ে খেলবে? সে কি খাবে? কোন রঙের জামা পড়বে? এতে করে তার মনে ভাব সহজেই প্রকাশ করা শিখবে।

৫. শিশুকে ব্যস্ত রাখুন: বাচ্চার যখন জেদ করতে শুরু করবে তখনই তার মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। সেই সময় বাচ্চাকে অন্য কিছু দিয়ে ভোলাবার চেষ্টা করুন। কোনো ইলেকট্রনিকস গেজেট নয়, বরং শিশুকে কিছু খেলনা দিয়ে জেদের সময় তাকে ব্যস্ত রাখুন। শিশুর ক্ষুধা, অতিরিক্ত উত্তেজনা, একঘেয়েমি, বিষণ্ণতা কাটাতে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হাতের নাগালে রাখা উচিত। এইভাবে বাচ্চাকে কন্ট্রোল করতে শুরু করলে সেল্ফ কন্ট্রোল বোধ তৈরি হবে।

 

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button