বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে যুক্তরাষ্ট্রকে ধাক্কা চীনের

ক’দিন আগেও ডিপসিক সম্পর্কে কেউ তেমন জানতেন না। অথচ এখন চীনের এ প্রযুক্তি কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটি গুগল, ওপেন এআইসহ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর একচেটিয়া এআই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

সম্প্রতি আত্মপ্রকাশের পর অ্যাপল স্টোরে ডাউনলোডে শীর্ষে পৌঁছায় ডিপসিক এআই। এতে আগে থেকে বাজারে থাকা বেশ কয়েকটি মার্কিন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের লোকসানের মুখ পড়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, ডিপসিক এআই চ্যাটবট মার্কিনিদের জন্য সতর্কবার্তা।

২০ জানুয়ারি ডিপসিক এআই চ্যাটবট বাজারে ছাড়ে। বিশ্ব ও সব প্রযুক্তি কোম্পানির কাছে পরিচিত হওয়ার আগেই এটি ব্যাপক সাড়া জাগায়। স্বল্প খরচের ডিপসিকের কারণে নিউইয়র্কের পুঁজিবাজার ওয়ালস্ট্রিটে দেখা দেয় টালমাটাল অবস্থা। এতে পেছনে পড়ে যায় মার্কিন এআই প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো। চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এনভিডিয়া সোমবার ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য হারায়, যা ছিল মার্কিন ইতিহাসে এক দিনে সবচেয়ে বড় লোকসানের রেকর্ড।

এ প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, এটা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য ‘সতর্কবার্তা’। তাদের অবশ্যই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিপসিকের সাফল্য প্রযুক্তি খাতে বেইজিংয়ের শ্রেষ্ঠত্ব ঠেকাতে ওয়াশিংটনের চেষ্টাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক চিপের রপ্তানি বন্ধের  মধ্যেই চীন এ সাফল্যের মুখ দেখল। তবে অপেক্ষাকৃত সস্তা ও দ্রুতগতির এআই পদ্ধতি তৈরির উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ট্রাম্প। সোমবার ফ্লোরিডায় তিনি বলেন, চীনের কোম্পানির তৈরি ডিপসিক এআই চালুর বিষয়টি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন সতর্কবার্তা দিচ্ছে যে, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি চীন ও দেশটির কিছু কোম্পানি সম্পর্কে পড়ছি। বিশেষ করে একটি কোম্পানি অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতির ও অনেক কম খরচের এআই পদ্ধতি নিয়ে আসছে। এটা ভালো। এতে আপনাদের অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হবে না। আমি এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি, সম্পদ হিসেবে দেখি।’ কেন ইতিবাচক ভাবছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কারণ, আপনারাও কাজটি করবেন। আশা করি, আপনাদের বেশি খরচ করতে হবে না, কিন্তু একই ফল পাবেন।’

ডিপসিক বলছে, তারা এটা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম অগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর তুলনায় কম সংখ্যক চিপের ব্যবহার করেছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, ডিপসিক এআই চ্যাটবট তৈরিতে ৬০ লাখ ডলারের কম খরচ করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানি ওপেন এআই ও গুগলের বিলিয়ন ডলারের তুলনায় বেশ কম। এ দুটি কোম্পানি যথাক্রমে চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির উদ্ভাবক।

মূলত এ কারণেই চীনের এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বরাবরই এআই সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিজ দেশের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাগিদ দিয়ে আসছেন।

অন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ডিপসিক এআই যন্ত্র হয়েও মানুষের মতো পারফরম্যান্স দেখাতে পারে। এটি শেখা ও সমস্যা সমাধানের প্রযুক্তি। সাধারণত এর মধ্যে বিপুল পরিমাণ তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি মানুষের মতো কথা বলতে পারে, প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, সমাধান দিতে পারে সমস্যার। ডিপসিকের আগে সবচেয়ে বেশি চ্যাটজিপিটির নামই শোনা যেত।

চীনের হ্যাংঝুভিত্তিক গবেষণাগারে তৈরি হয়েছে ডিপসিক এআই মডেল। ২০২৩ সালে গবেষণাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৌশলী লিয়াং ওয়েনফেং। ওপেন-সোর্সভিত্তিক এআই মডেলটির চ্যাটবট অ্যাপ অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে উন্মুক্তের পরপরই সাড়া জাগায়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ অনেক দেশে এটি চ্যাটজিপিটির চেয়ে বেশিবার নামানো হয়। এরপরই মডেলটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী শুরু হয় আলোচনা। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চ্যাটজিপিটি।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button