Top Newsসংবাদ সারাদেশ

রাজা যায়, রাজা আসে

মোহনা অনলাইন

রাজা যায়, রাজা আসে। প্রতি রাজাই নিয়ে আসেন, দেশ এবং দেশের মানুষের উন্নয়নে নতুন কোন শ্লোগান। কারো শ্লোগান ছিল, ‘ সবুজ বিপ্লব ‘। কেউ আবার বলেছিলেন, ‘আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’। একজন নিয়ে আসলেন, ‘ভোট এবং ভাতের অধিকার ‘। এরপর এলো, ‘ গনতন্ত্র সুসংহত করতে হলে উন্নয়ন অগ্রাধিকার ‘।

এখন চলছে রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনে, ‘সংস্কার ‘। বড়, বড় বুদ্ধি বিশ্লেষকেরা তাদের বুদ্ধি বিবেচনায় এইসব শ্লোগান সৃষ্টি করেন। এবং রাজার মাধ্যমে এইসব শ্লোগান ফরমান জারী করা হয় ! এই শ্লোগান প্রচারে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যপক অর্থ ব্যয় হয়।

রাজাদের ব্যর্থতা হচ্ছে, বুদ্ধি বিশ্লেষকদের বুদ্ধির কথা সাধারণ জনগণ বুঝে না। সাধারণ জনগণ নিশ্চয়তা চায় খাদ্য এবং নিরাপদে রাত্রি যাপন। এমনকি বাসস্থান, স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষার কথা তারা বলে না। এই কথাটাই আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত রাষ্ট্র বিশ্লেষকদের মাথায় আসে না। তারা পশ্চিমা বিশ্বের আদলে দেশ নিয়ে ভাবেন। তাই দেশের মানুষ এবং দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন থেকে বহু যোজন দুরে তাদের ভাবনার ফসল !

তাই ব’লে দেশ এবং দেশের মানুষ বসে থাকেনি। নিজ উদ্যোগে তারা দেশ আর দেশের অর্থনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্নে জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাতকোটি। আজ এসে দাড়িয়েছে প্রায় আঠারো কোটি। বাংলাদেশের কৃষক তাঁদের শ্রম, মেধা এবং উদ্যোগ দিয়ে এই আঠারো কোটি মানুষের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে চলছে।

সাধারণ পরিবারের সন্তানেরা নিজ ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় আজ প্রবাসী। তাঁদের কষ্টার্জিত পাঠানো অর্থ দেশের প্রতিটি উন্নয়নে প্রধান সহায়ক-শক্তি। এই সকল প্রবাসী শ্রমিকেরা নিজ ভিটে বাড়ি বিক্রি করে ভাগ্য পরিবর্তনে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। বিদেশ গমনে সরকার বা বেসরকারী পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনোই সহযোগিতা বা সহায়তা পায়নি। নিজ উদ্যোগেই তারা তাদের লক্ষ্য ঠিক করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নে পোশাক শিল্প এক বিশাল ভূমিকা রেখে চলছে। ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা এবং সাধারণ শ্রমিক বিশেষ করে নারী শ্রমিকে শ্রমের অংশগ্রহণ। এই লোকদের মেধা এবং শ্রমের মধ্য দিয়ে বিশ্বে আজ প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধান আয় হচ্ছে, পোশাক রপ্তানি। এই শিল্প গড় উঠতে রাজাদের কি খুব একটা ভূমিকা আছে ?

তবে হ্যাঁ, একজনের অবদানের কথা না স্বীকার করলেই না। তিনি হলেন একজন সাবেক জেনারেল এবং পরবর্তীতে এদেশের রাষ্ট্রপতি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বিদেশে শ্রম রপ্তানি এবং এই দেশে পোশাক শিল্প গড়ে তোলার প্রধান উদ্যোক্তা, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তাঁর দেখানো পথ ধরেই আজকের অবস্থা।

আরেকটি উদ্ভাবন যা এই দেশের অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার করেছে। তা হচ্ছে, নৌকায় ইঞ্জিন ব্যবহার। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য তরিৎ গতিতে জেলাশহরে পৌঁছে দিচ্ছে। নদীমাতৃক এই দেশে নৌকায় ইঞ্জিন ব্যবহার করে স্বল্প ব্যয়ে যোগাযোগে গতি এনেছে। একদিকে কৃষক উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রিতে সহায়তা পাচ্ছে। একই সাথে ভোক্তা-ও সহজেই প্রয়োজনীয় কৃষি পণ্য লাভ করছে। এই বাহন না থাকলে,করোনা কালীন খাদ্য সরবরাহে সঙ্কট দেখা দেয়নি। এটাও বাংলাদেশের বড় মাপের কোন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেননি। সাধারণ মানুষ নিজ প্রয়োজনে এবং নিজ উদ্যোগে নৌকার পেছনে ইঞ্জিন লাগিয়ে নিয়েছে।

এতো প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতার পরও বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সাথে রাজনীতি গতি মেলাতে পারেনি। তাই রাজনীতি পিছিয়ে গেছে। অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি এসেছে। রাজনীতির বাংলাদেশ জলাবদ্ধ হয়ে আছে। রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে এই যে ব্যবধান, এটা আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিক বুঝতে পারে না। এমনকি আমাদের অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞানী এবং বুদ্ধিজীবী’রাও বিষয়টি বুঝতে পারেনি। কিংবা জ্ঞাত নন !

গত ১১ জানুয়ারি, ত্বকী মঞ্চের অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,’ আমরা রাষ্ট্র বারবার বদল করেছি। বড় রাষ্ট্রকে ছোট রাষ্ট্র করেছি, কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। সমাজে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেনি। বলা হয়েছিল যে বিপ্লব ঘটেছে। বিপ্লব তো দেখা যাচ্ছে না। একটা সরকারের পতন হয়েছে মাত্র, ব্যবস্থা তো সব আগের মতোই রয়েছে। কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছে যে এটা একটা সরকারের পতন মাত্র, ব্যবস্থার পতন নয়। ব্যবস্থা সেই আগের মতোই রয়ে গেছে! ‘

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন, সবাই যেন না পাওয়ার আগুনে চলছে। সবার সব পাওনা আদায় করে নিতে হবে। সে দাবী ভুল কিংবা সঠিক সে বিবেচনা নেই। এই পাওয়ার দাবী নিয়ে দেশকে বোধহয় নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের সবথেকে বড় অংশ কৃষক এবং সাধারণ শ্রমিক এদের বোধহয় কোন দাবী বা চাওয়া পাওয়া নেই !

বিতারিত সরকার আমলে ২৪ সালের নির্বাচন পূর্ব সাবেক মন্ত্রী এবং ইত্তেফাকের সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ক্ষোভের সাথে বলেছিলেন, অবস্তার পরিবর্তন চেয়েছিলাম। কিন্তু হয়নি ! এখন তো আর চাওয়ার সময় নাই । এখন নতুন জেনারেশন কি করে ।তারা আমাদের মতো আসা করবে ফাইট করবে । ফাইট করবে এবং আশা করবে। ফাইট করতে, করতে একসময় মারা যাবে। কারন এই দেশ চালানো অত্যন্ত কঠিন এবং অত্যন্ত জটিল। এর ভিতর অনেক কিছু লুকিয়ে আছে ! এটা কোন নরমাল দেশ না। যারা এটাকে নরমাল দেশ হিসেবে দেখতে চান আমি তাদের জন্য বলছি, I wish all the best !

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button