
টানা ১২ দিন বিশ্বজুড়ে একপ্রকার আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হয়েছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে। অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছিল—এই উত্তেজনা কি সত্যিই বৈশ্বিক সংঘাতে রূপ নিতে যাচ্ছে? পরিস্থিতি আরও জটিল হতো যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ত। শেষ পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোয় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মধ্যপ্রাচ্যে।
তবে এই উত্তেজনার মাঝেও এক ভিন্নধর্মী প্রশ্ন সামনে এসেছে—আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপ নিয়ে। ৪৮ দলের এই মেগা আসর বসবে উত্তর আমেরিকায়, যার বড় একটি অংশ আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করেছে ইরান। আর এখান থেকেই মূল বিতর্কের সূত্রপাত।
প্রশ্ন উঠেছে—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনায় থাকা ইরানকে ঘিরে ফিফা কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে? বর্তমান ফিফা বিধিমালায় এমন কোনো নিয়ম নেই যা ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রে খেলা থেকে বিরত রাখতে পারে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ইরান একাধিকবার সামরিক হামলার লক্ষ্য হয়েছিল এবং দেশটির নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে সেই নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে, ফলে প্রবেশে বড় কোনো জটিলতার আশঙ্কা নেই।
বর্তমান সূচি অনুযায়ী, ইরান যদি গ্রুপ ‘এ’-তে পড়ে, তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে না গিয়ে মেক্সিকোতে গ্রুপপর্বের সব ম্যাচ খেলতে পারবে। এমনকি গ্রুপ ‘এ’ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ৩২ ও শেষ ১৬ পর্বে উঠলেও ম্যাচগুলো মেক্সিকোতেই অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে যেতে হতে পারে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের গ্রুপ ড্রয়ের আগে ফিফা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো শুরু থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। অনেকের ধারণা, এই বিষয়েও তিনি কার্যকর কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেন। গ্রুপ ড্রয়ের চূড়ান্ত কাঠামো নির্ধারণ করবেন ইনফান্তিনো ও ফিফা কাউন্সিল। তবে এই প্রক্রিয়ায় ফিফার প্রতিযোগিতা সংগঠক কমিটিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই কমিটিতে কানাডা, মেক্সিকো ও ইরানের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এবং এর নেতৃত্বে আছেন উয়েফা প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার সেফেরিন।
২০২২ সালে তার নেতৃত্বেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে উয়েফা সিদ্ধান্ত নেয় ইউক্রেন ও বেলারুশকে এক গ্রুপে না রাখার। একই পদ্ধতি ফিফাও অনুসরণ করতে পারে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে রাশিয়াকে উয়েফার সব প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং তারা বিশ্বকাপেও অংশ নিতে পারেনি। তবে এখন পর্যন্ত ইরানকে ঘিরে তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসেনি।