Top Newsরাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছর মেয়াদে শর্তসাপেক্ষে রাজি বিএনপি

মোহনা অনলাইন

নিজ অবস্থানে বড় পরিবর্তন এনে প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছরের মেয়াদ নির্ধারণে সম্মত হয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনসমর্থন বাড়ানো এবং ভাবমূর্তি উন্নয়নের কৌশল হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো সংস্থায় নিয়োগ তদারকির জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে দলটির। বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা, এই ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা খর্ব হতে পারে।

মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, যেখানে চলমান সংস্কার আলোচনার অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণের প্রস্তাবে একমত পোষণ করেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “ফ্যাসিবাদী প্রবণতা রুখে দেওয়ার জন্য সংবিধান অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। তাই আমরা প্রস্তাব করছি, কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।”

তিনি আরও বলেন, “একজন ব্যক্তি আংশিক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্ব করতে পারেন, যা এক বছরেরও কম হতে পারে। তাই সময়ের উপর ভিত্তি করে সীমা নির্ধারণ করাটাই যৌক্তিক।”

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, মেয়াদ নির্ধারণে অনড় অবস্থানে থাকায় বিএনপিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছিল। এমনকি জামায়াতও এই ইস্যুকে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এজন্যই দলটি অবস্থান বদলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের মেয়াদে রাজি হয়েছে।

তবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন নিয়ে বিএনপি এখনো সতর্ক। নেতারা মনে করেন, এতে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে প্রয়োজনে তারা আগের ৩১ দফা সংস্কার রূপরেখায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ টানা দুইবার নির্ধারণের প্রস্তাব ছিল।

বৈঠকে একজন জ্যেষ্ঠ নেতা কাউন্সিলের ধারণাকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দেন। দলটির অবস্থান হলো—নিয়োগ সংক্রান্ত স্বচ্ছতা বিদ্যমান আইন সংস্কার বা নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আনা হোক, নির্বাহী ক্ষমতা সীমিত করে নয়।

প্রসঙ্গত, তিন মাস আগেও বিএনপি ‘দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়’—এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছিল। তখন তাদের অবস্থান ছিল, দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে কেউ চাইলে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।

তবে এখন দলটি বলছে, ১০ বছরের মেয়াদি সীমা তারা গ্রহণ করছে, যদিও এটি ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ঘোষিত তাদের ৩১ দফা রূপরেখার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এছাড়া মঙ্গলবারের বৈঠকে দলটি আরও কিছু প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে—যেমন দুইজন জ্যেষ্ঠতম বিচারকের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, নারীদের জন্য ১০০টি সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, এবং ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠন।

বিএনপি জানিয়েছে, সংবিধানে বড় ধরনের যেকোনো পরিবর্তন সংসদীয় বিতর্কের মাধ্যমে হতে হবে। দলটি সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জুলাইয়ের মধ্যে ‘চার্টার অব রিফর্ম’ প্রকাশে আগ্রহী, যা একটি আগাম নির্বাচনের পথ তৈরি করতে পারে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button