
মোবাইল ফোন, ব্যাংক কার্ড কিংবা নগদ অর্থ—এসব পেমেন্ট মাধ্যম এখন পিছিয়ে পড়ছে। ডিজিটাল পেমেন্ট এখন আর শুধু স্ক্রিনেই সীমাবদ্ধ নয়। এবার চশমা পরেই কেনাকাটার বিল পরিশোধের যুগে প্রবেশ করল বিশ্ব।
এই অভিনব প্রযুক্তি এনেছে চীনের ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা আলিপে প্লাস এবং ইলেকট্রনিকস নির্মাতা মেইজু। সম্প্রতি হংকংয়ে আলিপে এইচকে ও মেইজুর স্মার্ট গ্লাস ব্যবহার করে বাস্তব জগতে প্রথম সফল ডিজিটাল লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। এতে গ্রাহকরা স্মার্টফোন বা কার্ড ছাড়াই শুধুমাত্র স্মার্ট গ্লাস ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করতে সক্ষম হন।
স্টারভি স্ন্যাপ স্মার্ট গ্লাস একটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) ভিত্তিক ডিভাইস, যাতে রয়েছে ইনবিল্ট ক্যামেরা, নয়েজ ক্যানসেলিং মাইক্রোফোন এবং উন্নত AI প্রসেসিং ইউনিট।
ব্যবহারকারীরা এই গ্লাস দিয়ে কিউআর কোড স্ক্যান, ভয়েস কমান্ড এবং হেড জেসচারের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন। চোখের সামনে ভেসে ওঠা ভার্চুয়াল ইন্টারফেসে পেমেন্ট অপশন বেছে নেওয়া, পরিমাণ নির্ধারণ এবং অনুমোদন দেওয়া যায় সহজেই। শব্দ ও ব্যস্ত পরিবেশ থেকে শুধু নির্দিষ্ট ভয়েস কমান্ড শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তি।
এই গ্লাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পার্সোনালাইজেশন। ব্যবহারকারীর অভ্যাস, পছন্দের দোকান, লেনদেনের সময় ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে AI পেমেন্ট পরামর্শ দেয়।
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় রয়েছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন, যা নিশ্চিত করে যে কোনো পেমেন্ট তথ্য ফাঁস হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তি বিশেষ উপকারে আসবে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক নাগরিক এবং হ্যান্ডস-ফ্রি অভিজ্ঞতা খোঁজেন এমন গ্রাহকদের জন্য।
শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, পার্কিং লটসহ স্পর্শবিহীন দ্রুত লেনদেন প্রয়োজন এমন যেকোনো পরিবেশে এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
আপাতত এটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে ২০২৫ সালের পর ধাপে ধাপে বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তিটি চালু হবে।
বিশ্বের অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্ট যেমন গুগল, অ্যাপল ও স্যামসাং ইতোমধ্যেই স্মার্ট গ্লাস নিয়ে কাজ করছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যেই এই ধরনের ওয়্যারেবল পেমেন্ট সল্যুশন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।