বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাক্সক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। সুতরাং আপনাদের নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, বিবাদ, বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না- যাতে করে প্রতিপক্ষ আপনাদের মধ্যকার বিরোধের সুযোগ নিতে পারে। এ অবস্থায় দলের চূড়ান্ত হওয়া ‘একক প্রার্থীকে বিজয়ে’ সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
গতকাল রাতে দলের এক অনুষ্ঠানে ‘শিগগিরই দলীয় একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে’ জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, জনসমর্থিত ও জনপ্রিয় দল হওয়ায় প্রতিটি নির্বাচনি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। করাটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি অবশ্যই গৌরব ও সম্মানের। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়নবঞ্চিত হবেন। বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাটিকে মেনে নেবেন। দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসাবে গণ্য করবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সমর্থন পেতে গণসংযোগ করছেন, সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী। খালেদা জিয়ার সৈনিক। বিএনপির কর্মী ও ধানের শীষের সমর্থক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন।
তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছেন। চাকরি কিংবা পেশাগত কারণে অনেকে যেমন প্রবাসী হয়েছেন, একইভাবে বিগত ১৫-১৬ বছরে কেউ কেউ ফ্যাসিস্টের রোষানলে পড়েও প্রবাসী হতে বাধ্য হয়েছেন। দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিরলস ভূমিকার জন্য প্রবাসীদের অভিনন্দন জানান তিনি।
তারেক রহমান আরও বলেন, লাখো প্রবাসী দূর থেকে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠান। জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান এই মুহূর্তে ৬ থেকে ৭ শতাংশ। সুতরাং দেশে প্রবাসীদের পরিবার ও তাদের অর্থসম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম বিশেষ দায়িত্ব। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন থেকেই জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের অধিকার ও সুযোগ চেয়ে আসছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে তাদের সেই আশা অনেকাংশেই পূরণ হতে যাচ্ছে। এবারই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ লাখের মতো প্রবাসী ভোটদানের সুযোগ পাচ্ছেন। আমি প্রবাসী ভাইবোনদের ভোট প্রদানের এই সুযোগকে একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি হিসাবে বিবেচনা করি। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভবিষ্যতে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও কীভাবে সহজ করা সম্ভব হয়, সে পদক্ষেপ আমরা অবশ্যই নেব।
উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ও বিদেশে আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। অথচ নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সমাজের উদাসীনতা ইদানীং মনে হয় একটু প্রকট হয়ে উঠছে। শনিবারের একটি পত্রিকার রিপোর্টে দেখলাম আগস্ট মাসে সারা দেশে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এর মধ্যে সাতজনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ৯৮ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন। নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসাবে গণ্য হতে পারে না। নারী এবং শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামাজিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলের বর্ণনা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচনিব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছরে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে-ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও কৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
তারেক রহমান আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে। যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকেও যতটুকু সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে সহযোগিতা করে আসছি। অথচ আমরা দেখছি, প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্যনতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণতি সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান, তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক সাইফ আলী খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।



