সংবাদ সারাদেশ

লক্ষ্মীপুরে স্ত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় স্বামীর সাজা

মামুনুর রশিদ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি 

জেলা সদরে গৃহবধূ তানজিনা আক্তারকে (২১) আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ায় স্বামী আবু ইউছুফকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ একই সঙ্গে তার ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামি ইউছুফের প্ররোচনায় তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে যা আদালতে প্রামণিত হয়। এতে আদালত তাকে সাজা দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত ইউছুফ সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়নের খন্দকারপুর গ্রামের মৃত হাসানুজ্জামানের ছেলে।

এজাহার সূত্র জানা যায়, ভিকটিম তানজিনা দালাল বাজারের খন্দকারপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার মেয়ে। ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল একই গ্রামের ইউছুফের সঙ্গে তানজিনার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর ইউছুফ তাকে শারিরীক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। তার কাছ থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ইউছুফ তাকে তালাক দেয়। এতে একইবছর ৩ ডিসেম্বর তানজিনা বাদী হয়ে ইউছুফ, তার ভাই ইদ্রিস ও মা শিরিন বেগমের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সামাজিকভাবে বৈঠকের মাধ্যমে তানজিনা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।

এদিকে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তালাক প্রত্যাহার করে এভিডেভিডে ইউছুফ তানজিনাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। এর কিছুদিন পর ফের তার ওপর অত্যাচার করা হয়। আবারো যৌতুকের জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়। এরমধ্যেই তানজিনাকে দেখতে আসে তার বোন তানহা আক্তার। তখন সে তার বোনকে জানায়, ‘যৌতুকের টাকা না দিলে সে আত্মহত্যা করবে’। ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল শ্বশুর বাড়িতেই ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে তানজিনা মারা যায়। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্ররোচিত হয়ে তানজিনা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

এ ঘটনায় ইউছুফসহ ৩ জনকে আসামি করে তানজিনার দুলাভাই আনোয়ার হোসেন সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম আসামি ইউছুফের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। এতে অন্য দুই আসামি ইউছুফের ভাই ইদ্রিস ও মা শিরিনের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা না পাওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ রায় প্রদান করেন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button