সংবাদ সারাদেশ

মজা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে শিশুকে যৌন নিপীড়ন দোকানির! রফাদফার চেষ্টা 

আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

বাবা অটোরিকশা নিয়ে বাইরে। মা কারখানায় চাকরি করতে গেলে ১০ বছরের শিশুটি পাশের দোকানে মজা কিনতে যায়। ফেরার সময় আরও মজা খাওয়ানোর কথা বলে আলম মিয়া নামের এক দোকানি শিশুটিকে দোকানের ভেতর ডেকে নেন। একপর্যায়ে শিশুটিকে বুকসহ স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতে থাকে। এসময় শিশুটির ডাক চিৎকারে আলম মিয়ার পরিবারের লোকজন চলে আসে। পরে সন্ধ্যায় কারখানা থেকে মা ফিরে আসলে বুকে ব্যাথার কথা জানায় শিশুটি। অমানবিক নির্যাতনের এমন ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে।

আজ শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরের দিকে ভুক্তভোগী শিশুটির বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরে তালা মারা অবস্থায় দেখা যায়। তবে, মুঠোফোনে পরিবারের লোকজন সাংবাদিকদের ওই ঘটনার বিস্তারিত জানান।

যৌন হয়রানির শিকার শিশুটি স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীতে পড়াশোনা করে। তাঁর বাবা অটোরিকশা চালক ও মা স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি করেন।

অভিযুক্ত আলম মিয়া (৪০) উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের কাইচাবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। এ ঘটনা জানাজানি হলে দোকানে তালা মেরে আত্মগোপনে চলে গেছে অভিযুক্ত আলম।

যৌন হয়রানির শিকার শিশুটির নানি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আমার নাতনি আলম মিয়ার দোকানে যায়। পরে মজা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে তাকে দোকানের ভেতর নিয়ে বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিতে থাকে। এতে সে ছুটার চেষ্টা করলেও আলম ঝপটে ধরে রাখে। পরে শিশুর ডাকচিৎকারে আলমের বাড়ির লোক চলে আসে। এ ঘটনায় কাউকে কিছু না বলতে নাতনিকে হুমকি ধামকী দেয়। সন্ধ্যায় আমার মেয়ে ( শিশুটির মা) বাড়িতে ফিরে আসলে নাতনির তার বুকে ব্যাথ্যার কথা জানান। কারন জিজ্ঞেস করলে দোকানদার আলম তার বুকে টিপে এবং শরীরে ঝাপটে ধরেছে বলে জানায় শিশুটি।

শিশুর নানি আরও বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে জানানো হয়। পরে শুক্রবার রাতে চেয়ারম্যান অফিসে শিশুসহ তার মাকে ডেকে নিয়ে সালিশের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে কিছু টাকা নিয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শিশুটির মাকে শাসানো হয়।

এ ঘটনায় গোসিংগা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য তাজ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ” এ ঘটনা নিয়ে আমার কাছে আসার পর আমি সরাসরি থানায় যাওয়ার জন্য বলেছি। পরে সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টি নিয়ে বসা হয়। সেখানে গিয়েও আমি এ বিচার আমাদের করার ক্ষমতা নেই এ কথা বলে সেখান থেকে আমি বের হয়ে যাই। নিচের সালিশ পরিষদের উপরে উঠে গেলে সেখানেও আমি গিয়ে এ বিচার বন্ধ করার জন্য বলি। সেখানে একজন মহিলা মেম্বার প্রার্থী ৫লাখ টাকার কথা বলে। আপনার বিশ্বাস না হলে সালিশে উপস্থিত হাদিউল ও শফিকুলকে জিজ্ঞেস করেন। আর কাইচাবাড়ি গ্রামের সভাপতি দেলোয়ার ১০ হাজার টাকার কথা বলেছিল। তারাই সব বলতে পারবে”।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন ইউপি সদস্য জানান, পরিষদের ভেতরে অনেক রাত পর্যন্ত ওই ঘটনার সালিশ চলে। প্রথমে নিচ তলায় পরে ওপরের তলায়। একপর্যায়ে আমরা চলে আসি। সবশেষে কি মিমাংসা হয়েছে তা বলতে পারিনি।

এ ঘটনার বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজনে শনিবার দুপুরের দিকে অভিযুক্ত আলম মিয়ার দোকান ও বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের লোকজনও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

আপোষ মিমাংসার সময় উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে কাইচাবাড়ি গ্রামের মসজিদের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, “সালিশ চলাকালে মিমাংসার সময় ওই শিশুর ভবিষ্যতে বিয়ের কথা চিন্তা করে তাঁর একাউন্টে ৫ লাখ টাকার কথা বলেছিল সেখানে উপস্থিত মহিলা মেম্বার প্রার্থী। আমি রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত ছিলাম। তবে, এসব মানসম্মানের বিষয় যত গোপনে আপোষ করা যায় ততই ভালো”।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজনে গোসিংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান শাহীনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

author avatar
Editor Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button