ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভারত মুখোমুখি হলেই যেন নাটকের সৃষ্টি হয়। ভারতের বিপক্ষে নাটকীয় জয় উত্তাপ ছড়িয়ে দেয মাঠের বাইরে। মাঠের বাইরে যেমন, মাঠের ভেতরেও – আর এই ট্র্যাডিশন সেই ২০০৭-এ ক্যারিবিয়ান থেকে চলছে।
সেই ষোলো বছর আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরেই কার্যত টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। ঘটনাচক্রে বাংলাদেশ ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ তারকা সাকিব আল হাসানের সেটাই ছিল প্রথম বিশ্বকাপ, আর ভারতকে হারানোতে বড় ভূমিকা রেখেছিল তরুণ সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ) স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত হাইভোল্টেজ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি।
আজ তার এতকাল বাদে পুনে-তে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে সেই বিশ্বকাপের আসরেই যখন দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে, তখন কিন্তু ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো।
বাংলাদেশের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও বুধবার সন্ধ্যায় স্বীকার করলেন, এই মুহুর্তে টুর্নামেন্টে ‘ইন ফর্ম’ টিম হল ভারতই – যারা দুর্ধর্ষ খেলছে।
অন্য দিকে বাংলাদেশের জন্য শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে টিঁকে থাকতে এই ম্যাচটা জেতা ভীষণ ভীষণ জরুরি – ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরপর দুটো ম্যাচে হেরে তাদের পিঠ একরকম দেওয়ালে ঠেকে গেছে বলা চলে।
বাংলাদেশের জন্য আরও দুশ্চিন্তার কথা, সাকিব আল হাসানকে আজকের ম্যাচে পাওয়া যাবেই – তা এখনও একশো ভাগ নিশ্চিত নয়।
ভারতও পাশাপাশি জানিয়ে রেখেছে, বিশ্বকাপে খেলা দল হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা সমীহ করছে ঠিকই – তবে তারা পর পর তিনটে ম্যাচে জেতার ‘মোমেন্টাম’টা এই ম্যাচেও ধরে রাখতে চায়।
দলের বোলিং কোচ পরশ মাম্বরে এটাও জানিয়ে দিলেন, ‘রোটেশন’ পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা ভারত এখন মোটেই ভাবছে না – যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে যশপ্রীত বুমরা বা কুলদীপ চাহাল, কিংবা শ্রেয়স আইয়ার-হার্দিক পান্ডিয়া – কাউকেই বিশ্রাম দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা টিম ম্যানেজমেন্টের নেই।
পুনের এই মাঠ খুব ভাল ব্যাটিং উইকেট হবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে – এবং বৃহস্পতিবার একটা হাই-স্কোরিং ম্যাচ দেখার প্রত্যাশাতেই রয়েছেন দর্শকরা।
পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বলতে হবে, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তাদের খেলা শেষ চারটে ওয়ান-ডের তিনটেতেই জিতেছে। যার মধ্যে শেষটা আবার গত মাসেই, এশিয়া কাপে।
বিশ্বকাপে আবার দু’দলের যে চারবার দেখা হয়েছে, তার মধ্যে তিনবারই জিতেছে ভারত। তবে এসব পুরনো পরিসংখ্যান হয়তো অনেকটাই অর্থহীন। চলতি বিশ্বকাপে আইসিসি-র স্লোগান হল, ‘ইট টেকস ওয়ান ডে’!
এটার এমনও অর্থ করা যায়, ক্রিকেটে একটা দিনেই সব পুরনো হিসেব ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে! র্যাঙ্কিংকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আফগানিস্তান ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হতবাক করে দিতে পারে ‘দুর্বল’ নেদারল্যান্ডস।
বাংলাদেশের হেড কোচ যেমন বলেই গেলেন, “আমাদেরও টুর্নামেন্টে ওরকম একটা দিন কিন্তু পাওনা!”
বিশ্বকাপে এ সপ্তাহে অনেক বড় বড় অঘটন ঘটছে – আজও তেমনই একটা দিন হতে যাচ্ছে কি না সে উত্তর পেতে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘন্টারই!
গত শুক্রবার চেন্নাইতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে খেলার সময় সাকিব আল হাসান উরুর পেশীতে যে চোট পেয়েছিলেন, সেটা পুরোপুরি সেরে গেছে তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। তবে গতকাল ও পরশু – দু’দিনই তিনি নেটে প্র্যাকটিস করেছেন। চুটিয়ে ব্যাটিং করলেও তাকে অবশ্য বল করতে দেখা যায়নি।
ম্যাচের আগের সন্ধ্যায় হাথুরুসিংহে জানালেন, সাকিব এখন ‘ওকে’! ভাল ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছে – রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও স্বচ্ছন্দ ছিল রীতিমতো।
এরপর বুধবার তাকে আবারও পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে স্ক্যান করাতে। সেটার রিপোর্টের ভিত্তিতেই আজ সকালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সাকিব খেলবেন কি না। কীভাবে সেই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হবে, সেটারও একটা আভাস দিয়েছেন হাথুরুসিংহে।
“প্রথম কলটা আমাদের মেডিক্যাল টিমের। তারা স্ক্যান রিপোর্ট ও আরও সব কিছু দেখে হয় গ্রিন সিগনাল বা রেড সিগনাল দেবেন। রেড সিগনাল দিলে তো আর খেলার প্রশ্নই নেই।“ মেডিক্যাল টিমের সবুজ সংকেত পেলে কোচ ও ক্যাপ্টেন (মানে সাকিব নিজে) মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন খেলানোটা ঝুঁকি হয়ে যাবে – না কি খেলানোই উচিত হবে”, জানান তিনি।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট মহলে যারা সাকিবকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন – তারা একবাক্যে বলছেন খেলার সামান্যতম সুযোগ থাকলে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ম্যাচটা যে কোনওভাবে হোক খেলবেন!
পুনে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় সোয়া ঘন্টার দূরত্বে মুম্বাই-পুনে এক্সপ্রেসওয়ের ধারে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের স্টেডিয়ামে এই প্রথম বিশ্বকাপের কোনও ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দীর্ঘ সাতাশ বছর আগে পুনেতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ম্যাচ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা শহরের অন্য মাঠে।