বাংলা বারো মাসের মধ্যে অন্যতম দুই মাস কার্তিক ও অগ্রহায়ণ। এই দুই মাস হলো হেমন্তকাল। হেমন্ত আসে শীতের আগমণী বার্তা নিয়ে। গ্রীষ্মের তীব্র গরমের পরে বৃষ্টির শুভ বার্তা নিয়ে আসে বর্ষা। এরপর স্বচ্ছ মেঘের ভেলায় চড়ে আসে শরৎ। এর দুই মাস পরে হেমন্ত আসে বাংলার বুকে মাঠভরা পাকা ধানের সোনালী রঙের ধান নিয়ে।
হেমন্তে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমুঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম ও বকফুলসহ নানা ধরণের ফুল। প্রতিটি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পরিবর্তিত হয় আমাদের জীবন ও প্রকৃতি। আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজসজ্জা ও ত্বকের যত্নের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন পড়ে।
নারীরা হেমন্তে সিল্ক শিফন, টাঙ্গাইল সিল্ক, সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক ইত্যাদির তৈরি পোশাক পরতে পারেন। কারণ এসময় গরম অনেকটাই কমে আসে। খাদির পোশাকও পরতে পারেন এসময়। সেক্ষেত্রে উজ্জ্বল রঙ আপনাকে মানাবে এই ঋতুতে। হেমন্তকে কেন্দ্র করে ফোঁটা ফুলের রঙের সাথেও পোশাকে এর প্রভাব লক্ষ করা যায়। এখন নানা ফুলেল মোটিফে শাড়ি হয়ে উঠেছে আরও মোহনীয়। উজ্জ্বল ও গাঢ় রং, যেমন গাঢ় নীল, গাঢ় কমলা, গাঢ় ম্যাজেন্ডা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের গাঢ় রঙের পোশাক পরার এখনই সময়। আরামদায়ক হবে লিনেন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, তাঁতের কাপড়ও।
এই মৌসুমে রাতে আর সকালের দিকে হিমেল হাওয়ার পরশ ছুঁয়ে যায় শরীরে। তাছাড়া বাকি সময়টা ঠান্ডা গরমের দেখা মেলে। তাই এ সময়ে ছেলেদের জন্য জর্জেট, সিল্ক, নেট কাপড়ের লং-কামিজ, স্কার্ট বেশ আরামদায়ক হবে। তাছাড়া টি-শার্ট কিংবা টপসের সঙ্গে জেগিংসও খুব আরামদায়ক। ছেলেদের কাছে এ সময়ের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায় ফুলস্লিভ টি-শার্ট কিংবা পলো টি-শার্ট। ক্যাজুয়াল লুকের টি-শার্টের সঙ্গে জিন্স বা সুতি প্যান্টও পরতে পারেন।
হেমন্তের হালকা ঠান্ডা আর হালকা গরমের এই সময়টাতে মাথায় খুশকি জন্মানো শুরু করে এবং এই খুশকির কারণে চুলগুলো রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই চুলের রুক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করে চুলকে নরম ও কোমল করে রাখতে ব্যবহার করতে পারেন কার্যকরি কিছু ঘরোয়া উপাদান।চুলের যত্নে হট অয়েল ম্যাসাজ বা হালকা গরম তেলের মালিশ বেশ পরিচিত একটি বিষয়। চুলের রুক্ষতা দূর করতে এটি দারুণ কার্যকরী। ভালো মানের নারিকেল তেল এভাবে ব্যবহার করলে রুক্ষতা অনেকটাই কমে। তবে একেকজনের চুলে একেক ধরনের তেল বেশি কার্যকরী। সেই অনুযায়ী একাধিক তেল মিশিয়েও চুলে সঠিকভাবে ম্যাসাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
চুলের ধরন অনুযায়ী তেলও বেছে নিন। যাদের চুল পাতলা তারা হালকা তেল যেমন জোজোবা বা আমন্ড তেল বেছে নিতে পারেন। আবার ঘন চুলের ক্ষেত্রে নারিকেল তেল বা আর্গান তেল বেছে নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক তেল মিশিয়ে সামান্য গরম করে মালিশ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, তেল খুব বেশি গরম করলে এর উপকারী উপাদান নষ্ট হতে পারে। তাই হালকা গরম তেল মাথার তালুতে ১০-১৫ মিনিট ধরে হালকাভাবে মালিশ করতে হবে। এরপর গরম পানিতে তোয়ালে ডুবিয়ে অতিরিক্ত পানি ফেলে দিয়ে চুলে বেঁধে রাখতে হবে। আধঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
হেমন্তের ঠান্ডা বাতাস মানুষের ত্বক থেকে দ্রুত আর্দ্রতা শুষে নেয়। গায়ের ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই এ সময়ে দরকার ত্বকে পরিপূর্ণ আর্দ্রতা। ত্বকের আর্দ্রতা বাড়াতে সাবান ব্যবহার কোন উপযোগী টিপস নয়। সাবানের ক্ষার ত্বককে আরো শুকনো করে দেয়। আপনার ত্বককে মসৃণ রাখতে ব্যবহার করতে পারেন কার্যকরী কিছু ক্লিনজার, টোনার, ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন। ওয়াটারবেসড লোশন না মেখে একটু ভারী ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন, যা অতিরিক্ত তেলতেলে না করে ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করবে। আর ঠোঁটের আর্দ্র রাখতে বছরের এই সময়য়ে গ্লসি লিপস্টিকই ভালো। গ্লসি লিপস্টিক একান্ত পরতে না চাইলে পরিবর্তে টিন্টেড লিপবাম পরতে পারেন। হাতের যত্নে হ্যান্ডক্রিম ব্যবহার করুন।