হার্ট অ্যাটাক হলে সাধারণত বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। আস্তে আস্তে সেই ব্যথা চোয়ালে অথবা বাম কাঁধ ও হাতে ছড়িয়ে পড়ে থাকে। এই রকম ব্যথা দেখা দিলে অব্যশই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় আমরা এমন ব্যথাকে গুরুত্ব দেই না।
ডাক্তাররা বলেন ব্যথাটাকে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির ব্যথা বলে ধরে না নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে পৌঁছতে হবে, কারণ হার্ট অ্যাটাকের পরে প্রথম এক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু চিন চিন করা ব্যথা হওয়ারও অনেক আগে আপনি নিজেই ইঙ্গিত পেতে পারেন যে আপনার হৃদযন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছে কি না। এর জন্য আপনাকে না হতে হবে বিশেষজ্ঞ, না দরকার ইসিজি মেশিনের মতো যন্ত্র। কিছু বিশেষ ব্র্যান্ডের স্মার্টওয়াচ, স্মার্টফোন বা ডিজিটাল স্টেথোস্কোপের মতো সহজে পাওয়া যায় এমন কিছু যন্ত্র, যা দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যেই আগাম ইঙ্গিত পাবেন যে আপনার হৃদযন্ত্র ঠিকঠাক চলছে কি না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হৃদরোগের চিকিৎসায় কী কী অবদান রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য কলকাতায় এখন চলছে তিন দিনের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন। কার্ডিওলজিকাল সোসাইটি অফ ইণ্ডিয়া আয়োজিত ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, রাশিয়া সহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে গবেষক-চিকিৎসকরা এসেছেন।
দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যেসব যন্ত্র আসছে, তা চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুমোদিত হোক বা স্মার্টওয়াচ, স্মার্টফোনের মতো ভোগ্যপণ্য হোক, সেগুলির এখনও যা দাম, তা ভারতের মতো দেশের সিংহভাগ মানুষেরই ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিষয়টি স্বীকার করছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরাও।
তবে ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের কোঅর্ডিনেটর ডা. কাজল গাঙ্গুলি বলছিলেন, “এআই ব্যবহার করে যেসব যন্ত্র বা ব্যবস্থাপনা হৃদরোগের আগাম সতর্কতা দিতে পারে, তার বেশিরভাগই এখনও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে। “
“কিছু যন্ত্র বাজারে এসেছে, সেগুলোর দামও অনেকটাই বেশি ভারতের মতো দেশের মানুষের কাছে। কিন্তু আমরা আশা করব যে বাজারের সূত্র মেনেই যত বেশি এধরণের যন্ত্র বাজারে আসবে, মানুষ কিনতে থাকবেন, ততই দামও কমবে। তখন আরও বেশি মানুষের সাধ্যের মধ্যে চলে আসবে এআই যন্ত্রগুলি। “
অন্য একটি সমাধান দিচ্ছেন ডা. মিন্টু তুরাখিয়া। তিনি বলেন, “ভারতের মতো দেশে ১০ বা ১৫ বছরের মধ্যে আমরা হয়তো এরকম কিছু ব্যবস্থার কথা ভাবতে পারি যে একেকটা ছোট গুমটি মতো করা হল – অনেকটা আগে যেরকম টেলিফোনের বুথ থাকত। “
ওই বুথগুলিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে, এমন বেশ কিছু যন্ত্র থাকল। সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়ে নিজেই নাড়ির গতি, ইসিজি বা রক্তে শর্করার পরিমাপের মতো পরীক্ষা করে নিলেন। এআই যন্ত্র যদি কোনও ইঙ্গিত দেয়, তাহলে ওই ব্যক্তি চিকিৎসকের কাছে গেলেন সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য, বলছিলেন ডা. তুরাখিয়া।
তার ব্যাখ্যা এক্ষেত্রে কোনও একজন ব্যক্তি যদি বেশি খরচ করে এআই ‘গ্যাজেট’ নাও কিনতে পারেন, তিনি প্রাথমিক ইঙ্গিতটা পেয়ে যেতেই পারেন ওইসব বুথে রাখা যন্ত্রগুলির মাধ্যমে। তবে চিকিৎসকরা বারবার সাবধান করছেন যে এআই হয়তো প্রাথমিক সতর্কতাটা জানাল। কিন্তু তারপরে চিকিৎসাটা কিন্তু ডাক্তারই করবেন। তিনিও আবার এআইয়ের সহায়তা হয়তো নেবেন। কিন্তু যন্ত্র কখনই চিকিৎসকের বিকল্প নয়, একটা সহায়ক মাত্র।