পানির ফোঁটা গোলাকার হওয়ার কারণ এর পৃষ্ঠটান। পৃষ্ঠটান তরলের এক বিশেষ ধর্ম। তরল পদার্থের বিশেষ কোনো আকার নেই। তরলের ভেতরে অণুগুলো অনেকটা মুক্তভাবে থাকে।
তাই যখন যে পাত্রে রাখা হয়, সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। এর মানে, কোনো পৃষ্ঠতলে যেমন ধরা যাক, একটা প্লেটে বা গাছের পাতার ওপর পানি রাখবেন আপনি, তখন তরলের উচিত গোটা পৃষ্ঠের ওপর পানি ছড়িয়ে পড়া। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি কোনো বস্তুর ওপর রাখলে গোটা পৃষ্ঠ জুড়েই তা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পানি যদি অনেক কম রাখেন, খুব সামান্য, যেটাকে আমরা ফোঁটা বলি, তাহলে কিন্তু গোটা পৃষ্ঠ জুড়ে সেই পানি ছড়িয়ে পড়ে না।
পৃষ্ঠটানের কারণ হলো, তরলদের অণুগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ। এই আকর্ষণের কারণে তরলের ভেতরে থাকা পরমাণুগুলো চারপাশের অন্য সব অণুদের থেকে টান অনুভব করে। ডানে-বামে, ওপর-নিচে সব দিক থেকেই টান অনুভব করে। তাই একটা অণুর ওপর নিট আকর্ষণ বল শূন্য হয়। ব্যাপারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ধরা যাক, একটা অণুর ডান পাশে অণু আছে, বাম পাশে আছে আরেকটা অণু। এর মাঝখানের পরস্পরের বিপরীত দিক থেকে টানছে। এবং টানের পরিমাণ সমান। তারমানে একটা আরেকটা টানকে খারিজ করে দিচ্ছে। এখন যদি সামনে-পেছনে এমন দুটো অণু থাকে, তাদের টানও পরস্পরকে নাকচ করে দেবে। ওপর নিচের অণুর গুলোর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটবে। তাই ঠিক মাঝখানের অণুগুলো কোনো টানই অনুভব করবে না।
গ্লাসের পানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বোঝা যায় ব্যাপারটা। ওপরের দিকে টান থাকে না গ্লাসের ওপরের স্তরের। কিন্তু কিনারের দিকে বাড়তি টান থাকে। কারণ গ্লাসের অণুর টান। গ্লাসের ঘনত্ব বেশি, তাই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় অণুর সংখ্যাও বেশি। এ কারণে গ্লাসের ভেতরের দেয়াল ঘেঁষে থাকা পানির অণুগুলো পাশের অণুগুলোর চেয়ে বেশি টান অনুভব করে। এ কারণে ওপরের স্তরের মাঝের অণুগুলো নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে, পানির ওপরের দিকটা অবতল হয়ে ওঠে।
সমতলে বা গাছের পাতার ওপর যে পানির ফোঁটা থাকে সেগুলোর চারপাশে কোনো দেয়াল থাকে না। কিন্তু নিচে কঠিন বস্তুর সমতল থাকে। কঠিন বস্তুতে অণুর ঘনত্ব বেশি বলে বাইরের স্তরের অণুগুলোও নিচের দিকে অর্থাৎ সমতলের দিকে টান অনুভব করে। কেন্দ্রের দিকে টান তো থাকেই। তখন পানির ফোঁটা পূর্ণ গোলকার না হয়ে অনেকটা ওপরের দিকে স্ফীত হয়ে উত্তল আকৃতিতে রূপ নেয়।