জীবনধারা

ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে পারবেন যেসব ফল

মোহনা অনলাইন

বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও, ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত শরীর বুঝে তবেই ফলের স্বাদ নেওয়া। কারণ কিছু কিছু ফল আছে যেগুলো খেলে তাৎক্ষণিক রক্তে শর্করার মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস নিঃশব্দে কেড়ে নিতে পারে প্রাণ। ভুল জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে সব বয়সের মানুষই ডায়াবেটিস রোগের শিকার হচ্ছেন। বিপজ্জনক বিষয় হল যে একবার কোনও ব্যক্তি এই রোগের শিকার হয়ে গেলে, এটি কখনও চিরমুক্তি হয়না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত করতে পারে।

ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো ডায়াবেটিস রোগের মূল কথা। টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। টাইপ-২ রোগীর শরীরে যে ইনসুলিন উত্পন্ন হয়, একে ব্যবহার করতে পারে না। চিকিত্সকদের পরামর্শ হচ্ছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারায় আগে থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে।

এ বিষয়ে ভারতের একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. রাহুল বাক্সি জানান, ডায়াবেটিস রোগীরাও চাইলে নিয়মিত ফলে খেতে পারবেন। অনেক ফলই ডায়েটারি ফাইবার, পটাসিয়াম, ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। সেগুলোতে চর্বি, সোডিয়াম ও ক্যালোরি কম থাকে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযাীয় ভিটামিন এবং ফাইবার রয়েছে এমন ফল খাওয়া উচিত। এসব ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস দূরে রাখতে সাহায্য করবে। তাই জেনে নিন, আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে, তা হলে এই মৌসুমে কোন ফলগুলো আপনি নির্দ্বিধায় খেতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত

কিউই: মজাদার এই ফলটি বিদেশি হলেও আজকাল আমাদের দেশে সহজেই কিনতে মেলে। এতে রয়েছে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি। আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে কিউই আপনার জন্য দারুণ ফল হিসেবে প্রমাণিত হবে । এতে থাকা ফাইবার উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে ৷  গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফলটি দেহের সুগারের স্তরকে কমিয়ে আনতে সহায়তা করে, তাই এই ফলটি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেশ কার্যকরি।

ছবি: সংগৃহীত

কালো জাম: গ্রীষ্মের ফল কালোজাম ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী একটি ফল। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে তাই ডায়াবেটিক রোগীরা একদম চিন্তামুক্তভাবে এই ফলটি খেতে পারেন। শুধু ফলই নয়, কালোজামের বীজকে গুঁড়ো করে দিনে একবার যদি হাফ চামচ খাওয়া যায় সেটিও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ছবি: সংগৃহীত

আপেল: সারা বছরই কোনও না কোনও জাতের আপেল পাওয়া যায়। আপেলে দ্রবণীয় ফাইবারে ভরপুর, আপেল রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। আপেলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম করতে ভালো কাজ দেয় এই ফাইবার। আপেলের মধ্যে রয়েছে পেকটিন। এটি ব্লাড সুগার কম করতে সাহা‌য্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিষ্টি আপেল ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয় একেবারেই। উচ্চ ফাইবারযুক্ত এই ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। আপেলের গ্লাইসেমিক ইনডেস্ক ৩০ থেকে ৫০। তাই দিনে একটি ছোট আপেল খাওয়া যেতেই পারে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গিয়েছে, কোনও আপেল না খাওয়ার তুলনায় প্রতিদিন একটি আপেল খেলে টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ২৮% কম ঝুঁকি থাকে। মনে রাখবেন আপেলে খাওয়ার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কম থাকে। আপেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েটি ফাইবারের একটি বড় উত্‍স। ফাইবার রক্তে সুগার ধীরে ধীরে শোষণ করে শক্তির উত্‍স প্রদান করে। তাই আপেলের সুগার নিয়ে ভয় পেয়ে দূরে রাখার কোনো কারণ নেই। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তরাও আপেল খেতে পারবেন। তবে খুব বেশি না খাওয়াই ভালো। প্রতিদিন একটি অথবা দুটি আপেল তারা খেতে পারবেন। আপেল খেতে হবে খোসাসহ। কারণ এর খোসায় থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

ছবি: সংগৃহীত

অ্যাভোকাডো: মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ বিদেশি ফল অ্যাভোকাডো হজমক্রিয়াকে ধীর করে এবং রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যাভোকাডোতে থাকা ভাল ফ্যাট ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

ছবি: সংগৃহীত

পেয়ারা: ডায়াবেটিস রোগীদের একটি বড় সমস্যা হল কোষ্ঠকাঠিন্য। পেয়ারার মধ্যে প্রচুর ফাইবার থাকে। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কম করতে সাহা‌য্য করে। পাশাপাশি রোগীকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশি পরিমাণে পটাশিয়ামযুক্ত খাদ্য খেতে বলা হয়। তবে তালিকায় সোডিয়ামযুক্ত খাবার না রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিশারদরা। এদিক থেকে পেয়ারা সর্বোৎকৃষ্ট ফল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পেয়ারায় ডায়েটারি ফাইবার থাকার কারণে জিআই খুবই কম পরিমাণে থাকে যা রক্তের শর্করা না বাড়িয়েই শরীরে দেয় বাড়তি পুষ্টি।

ছবি: সংগৃহীত

কামরাঙ্গা: বিশেষ করে টক কামরাঙ্গা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কালো জামের মতো এটিও রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে ফলে ডায়াবেটিক রোগীরা তাদের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ফলটি তাদের খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত

তরমুজ: যত ইচ্ছা তত পরিমাণে যে ফলটি খেতে পারেন ডায়াবেটিস রোগীরা, সেটা হচ্ছে তরমুজ। খিদে মেটানো, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগানো ছাড়া পানি শূন্যতাও রোধ করে এই ফলটি।

ছবি: সংগৃহীত

পিচ: ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য পিচ ফল দারুণ উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে এবং শরীরের বিপাক হার বাড়াতে সাহায্য করে পিচ। যদি সকালে স্মুদি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে দই বা ঘোলের সঙ্গে কয়েকটি পিচের টুকরো, সামান্য দারুচিনি গুঁড়ো এবং অল্প আদা দিয়ে স্মুদি বানাতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত

পেঁপে: পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। রক্তে গ্রুকোজের মাত্র বেড়ে গেলে রোগীর হার্ট, নার্ভের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নিয়মিত পেঁপে খেলে তা কিছুটা রুখে দেওয়া যায়। পেঁপে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়— এই ধারণা ভুল। পেঁপের ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ বা জিআই-এর মান অনেকটাই কম। তাই পরিমিত মাত্রায় ডায়াবেটিক রোগীরা নিজেদের ডায়েটে পাকা পেঁপে রাখতেই পারেন। তবে কাঁচা পেঁপে কিন্তু অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।

ছবি: সংগৃহীত

নাশপাতি: ডায়াবেটিকদের জন্য নাশপাতি বেশ উপকারী ফল। এতে আছে আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ। আর কম গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স’য়ের ফল বলে তৃপ্তি যুগিয়ে শর্করার কারণে হওয়া খিদার মাত্রা কমায়। এর আঁশের কারণে দেহে শর্করার শোষণ হয় ধীরে। নাশপাতি খাওয়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রতিদিন নাশপাতির মতো অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ ফল খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৩% কমাতে পারে। নাশপাতিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা ডায়াবেটিক ডায়েটে অবশ্যই রাখা উচিত। ফ্রুট সালাদ বানালেও অবশ্যই তাতে নাশপাতি রাখবেন।

ছবি: সংগৃহীত

আমলকী: আমলকীতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে। ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত আমলকী খেলে রক্তের চিনির পরিমান নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

ছবি: সংগৃহীত

আমড়া: আমড়া একটি পুষ্টিকর টক ফল। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটি খুবই উপকারী।

 

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button