প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মে পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণী নারী অথবা পুরুষ হয়েই জন্মগ্রহণ করে। সাধারণত পুরুষরা সারাজীবন পুরুষ এবং নারীরা নারী হয়েই জীবন অতিবাহিত করে। তবে এ নিয়মের ব্যতিক্রমী হয়েছে কিছু প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে। তথ্যটি জেনে আপনি যতটা অবাক হচ্ছেন ঠিক সেভাবেই বিজ্ঞানীদেরও পিলে চমকে উঠেছিল এই ঘটনা আবিষ্কারের পর।
প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গের অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে এশিয়ান শিপসহেড র্যাস নামক এক প্রজাতির মাছ। প্রজাতিটির পুরুষদের শারিরীক গড়ন নারী মাছের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। অন্য কোনো প্রাণীর মতো নয়, অন্যান্য প্রজাতির মাছের বৈশিষ্ট্য এদের মধ্যে প্রায় ১৫ আনাই বিদ্যমান।
তবে এই প্রজাতির মাছের ফোলানো মাথা আর লম্বা চোয়াল এক এলিয়েনের রূপ দিয়েছে এদের। এদের দাঁত দেখতেও বেশ ভয়ংকর। একেবারে সাজানো গোজানো পরিপাটি ছোট ছোট দাঁত নয়। আকারে বড় এবং বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখেই এদের দাঁত গজায়। যা দেখে রীতিমতো গা ছমছম করবে আপনার।
এই প্রজাতির নারী মাছেরা পুরুষ মাছের তুলনায় আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। শারিরীক গড়নও অন্যান্য সাধারণ মাছের মতোই।অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, প্রতিটি পুরুষ মাছের উত্থান ঘটে নারী মাছের থেকেই। তবে বিস্ময়কর পরিবর্তনটি কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে গবেষকরা গবেষণা করে পার করছে দিনের পর দিন।
কোরিয়ান উপদ্বীপ, চীন ও জাপানের তীরবর্তী অঞ্চলে এই প্রজাতির মাছের ব্যাপক বিচরণ দেখা যায়। জাপানে এই মাছকে ডাকা হয় কবুডাই নামে। এই মাছ লম্বায় ১ মিটার এবং ওজনে ১৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। কোরালযুক্ত সামুদ্রিক অঞ্চলেই এদের বসবাস। গ্রীষ্মের তাপমাত্রা চরমে পৌছালে, কাবুডাই প্রজননে মেতে ওঠে। প্রতিটি পুরুষ মাছ একটি নির্দিষ্ট এলাকা দখল করে রাখে। দখলকৃত প্রতিটি নারী মাছই তার অনুগত। পুরুষ মাছটি তার হেরেমের সব নারী মাছের সঙ্গেই মিলনের সুযোগ পায়। এই অঞ্চলে অন্য কোনো পুরুষ মাছের ঢোকার অনুমতি নেই।
তবে কোনো নারী মাছের বয়স ১০ পেরোলেই সে মিলনে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ এই সময় তার শরীরের নাটকীয় এক পরিবর্তন শুরু হয়। দেহে নারী হরমোনগুলো নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে পুরুষ হরমোন সঞ্চালন হতে শুরু করে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তার মাথা এবং থুতনি ফুলে ওঠে। নারী মাছটি পরিণত হয় এক দাপুটে পুরুষে।
এই পরিবর্তন কবুডাই রাজ্যে এক মল্লযুদ্ধের সূচনা করে। নতুন পুরুষ বয়স্ক পুরুষ মাছটির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। কারণ একটি অঞ্চলে একটি পুরুষই রাজত্ব করতে পারে। মাথা যত বড় প্রতিপক্ষ ভয় দেখানো তত সহজ। সম্মুখযুদ্ধে জয় পরাজয়ের মধ্যে দিয়েই রাজ্যের অধিপতি নির্ধারিত হয়। সব অধিকার ছেড়ে পরাজিত পুরুষ মাছটি প্রস্থান করে।
এখানেই শেষ নয়। কোনো পুরুষেরই ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত নয়। কারণ প্রতিজন নারীর অভ্যন্তরেই একেকটি দাপুটে পুরুষের বাস। সময়ের পরিক্রমায় যার আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং কাবুডাই রাজ্যে আসে নতুন অধিপতি।
কবুডাই পৃথিবীর আদিম মাছেদের মধ্যে অন্যতম। তবে সমুদ্র দূষণের জন্য এরা দিন দিন হারাতে বসেছে নিজেদের অস্তিত্ব। কোরিয়ান উপদ্বীপ, চীন ও জাপানের ওই সব অঞ্চল ছাড়া এদের খুব বেশি দেখা যায় না।