প্রত্যেক দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হল সেদেশের রাজধানী। রাজধানীর নামেই বহিঃবিশ্বের কাছে তারা পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু জানেন কি পৃথিবীতে এমন একটি দেশও আছে যার কোনও রাজধানী নেই!
বিশ্বে মোট ১৯৫টি দেশ রয়েছে। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব একটি রাজধানী আছে। কোনও দেশের রাজধানী এমন একটি শহর যেখানে সংশ্লিষ্ট সরকারের কার্যালয় থাকে এবং যেখানে আইন বা সংবিধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্বের বহু দেশের রাজধানীর নাম আমাদের অনেকেরই মুখস্ত। কিন্তু আজ আমরা এমন একটি দেশের কথা বলতে যাচ্ছি যার রাজধানীর কথা কেউ কখনও জিজ্ঞেস করে না। কারণ এই দেশের কোনও রাজধানীই নেই। এই দেশের নাম নাউরু। ছোটো বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দেশকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দ্বীপ রাষ্ট্রও বলা হয়।
এই দেশটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়ায় অবস্থিত। এটি নোরু নামেও পরিচিত। প্রায় ২১ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম স্বাধীন প্রজাতন্ত্রিক রাষ্ট্র এটি। এটি বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী দেশ যার এখনও কোনও রাজধানী নেই। ১৯০৭ সাল থেকে নাউরুতে ফসফেট খনন করা শুরু হয়। যা এখনও চলছে। এত অল্প জনসংখ্যা সত্ত্বেও এখানকার মানুষের মধ্যে দক্ষতার অভাব নেই। কম জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও এই দেশটি কমনওয়েলথ এবং অলিম্পিক গেমস্-এ অংশগ্রহণ করে আসছে। এই দেশের সরকারি মুদ্রা অস্ট্রেলিয়ান ডলার এবং এই অঞ্চলের অধিবাসীদের বলা হয় নাউরুয়ান।
বলা হয় যে, প্রায় ৩০০০ বছর আগে মাইক্রোনেশিয়ান এবং পলিনেশিয়ানরা এই দেশে দ্বারা বসতি স্থাপন করেছিল। এদেশের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েছে বটে, কিন্তু সেই সংখ্যাটাও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। কথিত আছে যে, এই স্থানটি ঐতিহ্যগতভাবে ১২টি উপজাতি দ্বারা শাসিত ছিল। যার প্রভাব দেখা যায় এদেশের পতাকাতেও। ৬০-৭০-এর দশক থেকেই এই দেশের আয়ের উৎস ছিল ফসফেট খনি। কিন্তু অতিরিক্ত শোষণের কারণে এই আয়ের উৎসও শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে এখানে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল উৎপন্ন হয়।
নাউরুতে পর্যটকের ভিড় বিশেষ হয় না। আর এই কারণেই এর সৌন্দর্য এবং স্নিগ্ধতা অটুট রয়েছে। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালে এই দ্বীপ রাষ্ট্রে মাত্র ২০০ জন পর্যটক গিয়েছিলেন। বিদেশিদের ভিড় কম বলেই এখানকার মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে এবং সুখে জীবনযাপন করেন। ২০১৮ সালের আদমশুমারি অনুসারে, এখানকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১১ হাজারের কাছাকাছি। আজও এই দেশ সম্পর্কে খুব কম মানুষই হয়তো খোঁজ খবর রাখেন।
এত কম জনসংখ্যা সত্ত্বেও এখানে একটি বিমানবন্দর রয়েছে। যার নাম ‘নাউরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। এখানকার অধিকাংশ মানুষই খ্রিস্টান। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা কোনও ধর্ম মানেন না। বর্তমানে নাউরুর অর্থনীতির মূল উৎস হলো ফসফেট মাইনিং, অফসোর ব্যাংকিং, মৎস্য শিকার ও বৈদেশিক সহায়তা। বর্তমানে দেশটির মাথাপিছু আয় ১৭ হাজার ৮৭০ ডলার। নাউরুর সরকারি মুদ্রা অস্ট্রেলিয়ান ডলার।