সন্তান লালন-পালন করা সহজ কাজ নয়। তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে কখনো কখনো কঠোর হতে হয় আবার কখনো ভালোবাসা দিয়ে তাদের মন জয় করতে হয়। শিশুরা সংবেদনশীল হয়। তাদের যত্ন করা এবং ভালো মানুষ করে গড়ে তোলা বাবা-মায়ের দায়িত্ব। সব অভিভাবকই সেই চেষ্টা করেন।
তবে শিশুদের লালন-পালনে সামান্য ভুল হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যা শিশুর ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তবে কর্মব্যস্ত এই জীবনে বেশিরভাগ বাবা-মা ছোটখাট যে কোনো বিষয় নিয়েই সন্তানের উপর রেগে চিৎকার করেন কিংবা বকাবকি করে বসেন। জানলে অবাক হবেন, আপনি যতই ভালোবাসুন না কেন আপনার চিৎকার, চেঁচামেচি ও বকাবকি শিশুর মনে রাগ ও জেদের সৃষ্টি করে। এমন পরিস্থিতিতে আপনার নিজের ভুলগুলো মেনে নেওয়া জরুরি। না হলে যত দিন যাবে শিশু আরও রাগী ও জেদি হয়ে উঠবে। আর আপনার শাসনেও কাজ হবে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব সেই অভ্যাসগুলোতে পরিবর্তন আনা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বাচ্চাদের সঙ্গে কর্কশ ব্যবহার, তাদের প্রতি অমনোযোগী হওয়া একদমই ঠিক না। চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার কোন কোন ভুলে শিশু আরও জেদি হয়ে ওঠে ও কীভাবে তার সমাধান করবেন-
বাচ্চার কথা না শোনা: বাচ্চারা কৌতুহলী হয়। তারা তুখোড় পর্যবেক্ষকও। যেকোনো বিষয়ে কৌতূহলের সঙ্গে জানতে চায় কিংবা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বাবা মাকে। প্রায় অধিকাংশ বাচ্চাই এমনটা করে। কিন্তু অভিভাবকরা বাচ্চাদের এমন অভ্যাস প্রথমে উপভোগ করলেও পরবর্তী সময়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। অনেক অভিভাবক তো ব্যস্ততার অজুহাতে কোনো কথাই শুনতে চান না। বাচ্চা কিছু বলতে নিলেই তাকে চুপ করিয়ে দেন। এমনকি কেউ কেউ তো বাচ্চার ওপর রেগেও যান। এমন আচরণ বাচ্চাদের ওপর সাংঘাতিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার পেছনে এটি বড় বাধা হয়।
মেজাজ শৃঙ্খলা: আপনার সন্তান যদি রাগান্বিত হয়, তবে কিছুক্ষণ পরেই তাকে শৃঙ্খলা সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে। আপনি যদি তাকে খারাপ মেজাজে কিছু শেখান তবে সে আরও বেশি বিরক্ত হবে। এছাড়া মনে রাখবেন, আপনি যদি রাগান্বিত হন তবে প্রথমে শান্ত হন ও পরে তাকে শৃঙ্খলার জ্ঞান দিন।
বাচ্চার মন খারাপের সময়: বাচ্চাদের মন অল্পতেই খারাপ হতে পারে। যেকোনো কিছু নিয়েই হঠাৎ কষ্ট পেতে পারে। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে তারা নিরাশও হতে পারে। এমন প্রতিক্রিয়া বাচ্চাদের ওপর আরও গুরুতর প্রভাব ফেলে। এই সময় বাচ্চাদের সময় দিন। মন খারাপের কারণ জেনে বাচ্চাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে হবে। বাচ্চার ভালো লাগার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।
তুলনা নয়: অনেকেই বাচ্চাকে সমবয়সী অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তুলনা করেন। এটাও অভিভাবকদের অন্যতম একটি ভুল। বাচ্চা কোনো কাজে অসফল হলে বা সমবয়সীদের তুলনায় ভালোভাবে করতে না পারলে অনেকে বকাও দেন। এটি বাচ্চার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে বাচ্চা নিজেকে শুধরে নেবে না, বরং হিতে বিপরীত হবে। তাই এমন ভুল করা যাবে না।
ভুল শুধরানো: বাচ্চারা ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। ভুল শুধরে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কিংবা সঠিক রাস্তা দেখানো বাবা-মায়ের দায়িত্ব। কিন্তু অভিভাবকরা যদি বাচ্চার ভুলের কারণে তাকে বকা দেন কিংবা মারধর করেন তবে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়।