হোটেল সোনারগাঁও, রেডিসন ও ঢাকা ক্লাবসহ বিভিন্ন অভিজাত জায়গায় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মোবাইল, ব্যাগ, ল্যাপটপ, নগদ টাকা ও স্বার্ণালঙ্কার চুরি করা অভিজাত চোর চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের একটি টিম।
গ্রেফতারকৃতের নাম জুবাইদা সুলতানা।গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে মহিলাদের ১৬টি হ্যান্ডব্যাগ, ৪টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের ৫টি ক্রেডিট কার্ড, স্বার্ণালঙ্কার, বিভিন্ন সুপার শপের কার্ড ও ৪টি পেনড্রাইভ উদ্ধার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ১৩ মার্চ দক্ষিণখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে ওয়েব-বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল হাসান জানান, জুবাইদা সুলতানার পেশা মূলত চুরি। সে বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেল ও রেস্টুরেন্টে পেশাজীবি সংগঠনের সভা-সিম্ফোজিয়াম, সেমিনারে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে অংশগ্রহণ করতো। সারাদিন গুরু-গম্ভীর আলোচনার ফাঁকে চুরি করে সটকে পরতো।
মাহমুদুল হাসান আরো জানান, জুবাইদা সুলতানা নিজেকে ডা. ফারহানা হক পরিচয় দিতো। নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি অনকোলজী বিভাগের হেড অব অনকোলজী হিসাবে পরিচয় দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে রোগীদের চিকিৎসাও দিয়েছে।
জুবাইদা সুলতানা গত ৩ মার্চ ঢাকা ক্লাবে গাইনোলজিক্যাল অনকোলজী বিষয়ক এক সেমিনারে অংশগ্রহণ করে ডা. ফারহানা হকের মোবাইল, ব্যাগ ও গহনা চুরি করে। দামীসব জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলেও ডা. ফারহানার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটি স্থানান্তর করে নেয় নিজের মোবাইলে। সেই থেকে ডা. ফারহানা সেজে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে রোগীদের। অবশেষে গোয়েন্দা-জালে গ্রেফতার হয় কথিত ডা. ফারহানা হক ওরফে জুবাইদা সুলতানা।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাহমুদুল হাসান আরও জানান, গ্রেফতারকৃত জুবাইদা সুলতানার স্কুল এবং কলেজ জীবন থেকেই তার চুরির এই অভ্যাস গড়ে উঠে। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় তার যাতায়াত ছিলো। এক সময় পরিবার থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং চুরি ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে সে চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। বড় বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং ক্লাবগুলোকে সে টার্গেট করে তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতো এবং সেখান থেকে মোবাইল, ব্যাগ, টাকা, স্বর্ণালংকার ও কসমেটিক্স ইত্যাদি চুরি করতো। বর্তমানে তার দ্বিতীয় স্বামীই তাকে এসব জায়গাতে যাওয়ার তথ্য দেয় এবং রেজিস্ট্রেশনের কাজ করে দেয়। এসব জায়গায় যাতায়াতকৃত লোকজনদের সাধারণত চুরি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকাতে তার চুরি করতে সহজ হতো। এ পর্যন্ত সে ৭ থেকে ৮শত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করেছে। কয়েক বছরেই সে কয়েক কোটি টাকার উপরে আয় করেছে।
জুবাইদা সুলতানার নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক ও চুরির মামলা রয়েছে। তার বর্তমান স্বামীও চোর চক্রের অন্যতম সদস্য। তার স্বামীর বিরুদ্ধেও চুরির মামলা রয়েছে। তার স্বামী সৌদি-আরবের একটি নাম্বার ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ চালায় এবং তাকে চুরির কাজে সহযোগিতা করে। তার স্বামী ও অন্যদের সহায়তায় চোরাই মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও অলঙ্কার বিক্রি করতো। প্রতিটি মামলায় জামিনে বের হয়ে সে আবার একই কাজ করতো।