রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্রথম আইপিএল শিরোপা জয়ের উৎসবে ঘটেছে হৃদয়বিদারক ঘটনা। উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের, আহত হয়েছেন ৩৩ জন। গতকাল বুধবার বিকালে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই ঘটনার পরও স্টেডিয়ামের ভেতরে উৎসব চলেছে!
মঙ্গলবার রাতে আইপিএল জেতার পর বুধবার বেঙ্গালুরুতে ফেরে আরসিবি দল। লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন তাদের নায়ক কোহলি এবং আরসিবিকে স্বাগত জানাতে। তবে বিশাল জনতার উচ্ছ্বাস বিপর্যয়ে শেষ হয়। মাঠে দ্রুত প্রবেশ ঘিরে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১১ জন, আহতও আরও বহু। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটিকে ‘একেবারে হৃদয়বিদারক’ বলে অভিহিত করেন।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেন, নিহত ১১ জনের অধিকাংশই তরুণ ছিলেন এবং শহরের এম. চিন্নাস্বামী ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাছে পদদলিত হয়ে আরও ৪৭ জন আহত হয়েছেন, যেখানে খেলোয়াড়রা ভক্তদের জন্য ট্রফি প্রদর্শন করছিলেন।
কোহলিরা যখন ভেতরে উৎসব মঞ্চে দিচ্ছিলেন প্রতিক্রিয়া, বাইরে তখন ঘটছে নির্মম পদপিষ্ঠের ঘটনা। পরে খবর পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান সকলে। কোহলি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন: ‘নির্বাক। একেবারে বিধ্বস্ত।’ বিবৃতি দিয়ে পুরো ঘটনায় মর্মাহত বলে জানায় আরসিবিও।
আহতদের মধ্যে একজন এএফপিকে বর্ণনা করেছেন কীভাবে একটি ‘বিশাল জনস্রোত’ তাকে পিষে ফেলেছিল। হুইলচেয়ারে বসে থাকা ওই মহিলা বলেন, ‘তারা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।’ নিহতদের অধিকাংশই তরুণ ভক্ত, যারা প্রিয় তারকাদের এক ঝলক দেখার জন্য এসেছিলেন।
ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা মনোজ কুমার তার ১৮ বছর বয়সী ছেলের মৃত্যুতে পাগলপ্রায় হয়ে আহাজারি করে বলেন, ‘আমি তাকে কলেজে পাঠাতে চেয়েছিলাম। আমি তাকে অনেক যত্ন করে বড় করেছি। এখন সে চলে গেছে।’
অভিযোগ উঠেছে যে, স্টেডিয়ামের বাইরে যখন ভয়াবহ ঘটনা ঘটছিল, তখন ভেতরে চলছিল অনুষ্ঠান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। যদিও বেঙ্গালুরুর বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে যে, ‘ঘটনার জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্রুত কর্মসূচি পরিবর্তন করেছি। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ এবং পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সব সমর্থককে নিরাপদে থাকার অনুরোধ করছি।’
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক কর্নাটকের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (কেএসসিএ) মৃতদের পরিবারপিছু ৫ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলোর জন্য বেঙ্গালুরু এবং কেএসসিএ যৌথভাবে ৫ লক্ষ রুপি করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করছে। আমাদের আশা, শোকের সময় এই পদক্ষেপ তাদের জন্য কিছুটা সহায়ক হবে। তারা হয়তো কিছুটা সান্ত্বনা পাবেন। এই ক্ষতিপূরণ কখনও মানুষের জীবনের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে না। তেমন উদ্দেশ্যও আমাদের নেই। এই কঠিন সময়ে আমরা শুধু পরিবারগুলোর পাশে থাকতে চাই।’



