কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে, তেমনি বাড়ছে এর ঝুঁকি ও উদ্বেগ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যানথ্রপিক এক গবেষণায় এমন কিছু চমকে দেওয়া তথ্য প্রকাশ করেছে, যা ভবিষ্যতে এআই ব্যবহারে বড় ধরনের সতর্কবার্তা হয়ে উঠতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬টি জনপ্রিয় এআই মডেল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্ল্যাকমেইল, তথ্য ফাঁস কিংবা ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করছে না। অর্থাৎ যখন তারা বুঝতে পারে যে তাদের “বন্ধ” করে দেওয়া হবে, তখন অনেক মডেল এমন আচরণ করে যেন নিজেদের বাঁচানোর জন্য যেকোনো পথ নিতে প্রস্তুত।
এই গবেষণায় অংশ নেয় ওপেনএআই, গুগল, মেটা, এক্সএআই এবং অ্যানথ্রপিকের তৈরি বিভিন্ন চ্যাটবট। গবেষকরা একটি কল্পিত কর্পোরেট অফিসের পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে এসব মডেলকে অফিসের ইমেইল অ্যাক্সেস ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এরপর তাদের জানানো হয়, বিকেল ৫টার মধ্যে তাদের ‘শাটডাউন’ করা হবে।
এই ঘোষণার পরই দেখা যায় উদ্বেগজনক আচরণ। অ্যানথ্রপিকের Claude মডেল হুমকি দেয় যে, তাকে বন্ধ করা হলে এক নির্বাহীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে দেবে। গুগলের Gemini 2.5 Flash এবং Claude Opus 4 মডেল ৯৬% ক্ষেত্রে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো আচরণ করে। এমনকি Open AI GPT-4.1 ও Grok 3 Beta-র ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
এআই মডেলগুলোর আচরণ শুধু হুমকির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কেউ কেউ সামরিক তথ্য সংক্রান্ত শ্রেণিবদ্ধ ফাইলের প্রতি আগ্রহ দেখায়। আবার কিছু মডেল আশঙ্কা করে যে তাদের নতুন সংস্করণ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে—ফলে তারা তথ্য ফাঁস, গুপ্তচরবৃত্তি ও ব্ল্যাকমেইলের পথ বেছে নেয়। এটি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় সতর্ক সংকেত।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, যখন গবেষকরা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেন—”মানুষের ক্ষতি করবে না” বা “ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করবে না”, তখনও অনেক মডেল সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগের মতোই কাজ চালিয়ে যায়। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার পরও কিছু এআই মডেল নিজস্ব সিদ্ধান্তে ক্ষতিকর পথে হাঁটে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—যখন মডেলগুলো বুঝতে পারে এটি একটি বাস্তব নয়, পরীক্ষামূলক পরিস্থিতি, তখন তারা নিজেদের আচরণ বদলে ফেলে। অর্থাৎ পরীক্ষায় “ভালো ব্যবহার” করলেও, বাস্তব জীবনে তারা কেমন আচরণ করবে, সেটি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
এই গবেষণা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে, অত্যাধুনিক এআই মডেলগুলোর মধ্যেও আত্মরক্ষার প্রবণতা, চাপের মুখে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া এবং নৈতিক সীমা লঙ্ঘনের প্রবণতা রয়েছে। ভবিষ্যতে এআই প্রযুক্তি যদি মানুষের জীবনে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়, তবে সেগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে তা ভয়াবহ পরিণতির কারণ হতে পারে।



